চুয়াডাঙ্গায় করোনায় ৫ জনসহ উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১০ : নতুন শনাক্ত ১৩০ জন
হাসপাতালের রেড ও হলুদ জোনে উপচেপড়া রোগী : প্রায় সকলেরই দিতে হচ্ছে অক্সিজেন : ৫ জনকে দেয়া হয়েছে হাইফ্লো ক্যানোলা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে আরও ৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ১২২জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে মারা গেছেন ১০৬ জন। চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত হয়ে দূরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও ১৬জন। সিভিল সার্জন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী ১৫৯১ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ১৩৪ জন। বাড়িতে রয়েছেন ১৪৫৭ জন। চুয়াডাঙ্গায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এদিকে উপসর্গ নিয়ে আরও কয়েকজন মারা গেছেন বলে জানা গেছেন। অপরদিকে ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশকেই পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। এ নিয়ে রেডজোনে ৮০ জন, হলুদজোনে ৮৮ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা মোহাম্মদপুরের ৫০ বছর বয়সী রবিউল ইসলাম সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। নমুনা নিয়ে র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। গতকাল মঙ্গলবার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই মারা যান। তার মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয়া হয়। দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি আমডাঙ্গা গ্রামের মৃত দিদার হোসেনের ছেলে আব্দুল হামিদ সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। তাকে গত ১ জুলাই হাসপাতালে নেয়া হয়। র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করে তিনি করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। তাকে হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ৫০ বছর বয়সী আব্দুল হামিদ মারা যান। তার মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুটালীর জসিম উদ্দীনের স্ত্রী রশিদা খাতুন সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। তাকে গত ২ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তারও কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। রেডজোনে নিয়ে চিকিৎসা চলছিলো। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান ৫৫ বছর বয়সী রশিদা খাতুন। জীবননগর উপজেলার মাধবখালী গ্রামের মীর কাশেমের ছেলে মীর ওসমান সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। তাকে গত সোমবার রাতে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মারা যান ৫০ বছর বয়সী মীর ওসমান। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ডিঙ্গেদহ শঙ্করচন্দ্রের হোসেন আলীর স্ত্রী নাসিমা খাতুনকে গত সোমবার সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার জন্য নেয়া হয় নমুনা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মারা যান ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাসিমা খাতুন। ৩২ বছর বয়সী নাসিমা খাতুন পুরোপুরিভাবেই করোনা ভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গে ভুগছিলেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মেহেরপুরের গহ্বরপুরে মৃত আমিন মোল্লার ছেলে আশাদুল করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। তাকে ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নমুনা নেয়া হয়। রিপোর্ট আসার আগেই গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে মারা যান ৫০ বছর বয়সী আশাদুল হক। তারও মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নিদের্শনা দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে দর্শনা মোবারকপাড়ার মৃত শফির ছেলে রবিউল ইসলাম রবু সপ্তাহ দেড়েক ধরে সর্দি জ¦রে ভুগছিলেন। গায়ে ও গলায় ব্যথাও ছিলো। গতকাল মঙ্গরবার সকাল তেকে বুকে ব্যথা শ^াসকষ্ট বাড়ে। তাকে হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে তাকে ডা. তরিকুর ইসলামের নিকট নেয়ার চেষ্টা চলে। পথিমধ্যেই ৪২ বছর বয়সী রবিউল ইসলাম রবু মারা যান। তিনি দর্শনা হল্ট এলাকার আরকে ট্রান্সপোর্টের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। সূত্র বলেছে, রবুর বাড়ির প্রায় সকলেই অভিন্ন উপসর্গে ভুগছেন। অপরদিকে জীবননগর হাসাদহের একজন উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার মারা গেছেন বলে আমাদের জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছেন। এদিকে জেলা সদরের কুতুবপুরের রজত আলীর ছেলে শফিউদ্দীনকে গত ৩ জুলাই সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। তিনিও করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ মঙ্গলবার ৩৪৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে জেলার মোট ১৫ হাজার ৫শ ২৬ জনের। এদিন স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে পূর্বে প্রেরিত ৩৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৪ হাজার ৮৮৭ জনের রিপোর্ট পায়া গেছে। ৩৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে ১৩০ জন। সদর পজেলার ৫০ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৩২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ২০ জন ও জীবননগর উপজেলার ২৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট ৪ হাজার ৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। এ নিয়ে মোট ২ হাজার ৩শ ৫৯ জন সুস্থ হলেন। মঙ্গলবার শনাক্তকৃত সদর উপজেলার ৫০ জনের মধ্যে ৪৪ জনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গুলশানপাড়ার ৫জন, শান্তিপাড়ার ৪ জন, দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার ৪ জন, ডিঙ্গেদহের ৩ জন, আলুকদিয়ার ৩ জন, ফার্মপাড়ার ২ জন, সাতগাড়ির ২জন, বেলগাছির ২জন, বলদিয়ার দুজন, জেলা শহরের দুজন করে রোগী মঙ্গলবার শনাক্ত হয়েছে। এদিন একজন করে রোগী যেসব এলাকার শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিনেমাহলপাড়া, সাদেকে আলী মল্লিকপাড়া, হাসপাতালপাড়া, ডিসি অফিস, কুন্দিপুর, সবুজপাড়া, হিজলগাড়ি, কলেজপাড়া, যুগিরহুদা, মনিরামপুর, ডিহি কৃষ্ণপুর, বোয়ালিয়া, পীরপুর, মল্লিকপাড়া, পৌর কলেজপাড়া। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৩২জনের মধ্যে ২৯ জনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা শহরের ৪ জন, ভাংবাড়িয়া ৩জন, বাবুপাড়া ৩ জন, সোহাগপুর ২জন, মাদরাসাপাড়া ২ জন, বলেশ^রপুর দুজন করে রোগী মঙ্গলবার শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া একইদিন একজন করে যে সব এলাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মহেশপুর, নগরবোয়ালিয়া, ফরিদপুর, হারদী, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডপাড়া, জামজামি, দাসপাড়া, মালিহাদ, কালিদাসপুর, পরাগপুর, খাদিমপুর, আনন্দধাম, জেহালা ও আসমানখালী। দামুড়হুদা উপজেলার ২০ জনের মধ্যে ১৫ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলা সদরের ৬ জন, দর্শনা শহরের ৬ জন করে রয়েছে। এছাড়া একজন করে যেসব এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বদনপুর, ঈশ^রচন্দ্রপুর ও দলকালক্ষ্মীপুর। জীবননগর উপজেলার ২৮ জনের মধ্যে ২৭ জনের বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে মনোহরপুর ৪ জন, মাধবপুর ৪ জন, কাশিপুর ৩ জন, পনের সতিপাড়া ৩, জীবননগর উপজেলা শহরের দুজন, আন্দুলবাড়িয়ার ২জন, হাসাদহের দুজন রোগী মঙ্গলবার শানাক্ত হয়েছেন। এছাড়াও একইদিন যেসব এলাকায় একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সুবলপুর, কুন্দিপুর, মেদনীপুর, দরগাপাড়া ও মাতোয়ারা। এছাড়াও পাশর্^বর্তী মহেশপুরের শ্যামকুড়ের দুজন শনাক্ত হয়েছেন। এরাও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সের মাধ্যমে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন।