চিকিৎসা সেবার মান ম্লান হয়ে যাচ্ছে মূলত দূষিত পরিবেশের কারণে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি

স্টাফ রিপোর্টার: সকল মেডিকেল অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাসময়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা সেবার মান আরও বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেছেন, যতো সমস্যাই থাক, যতো অভাবই থাক, আমাদের সম্মিলিতভাবে সকল অভাব ঘুচিয়ে, যথাসম্ভব সমস্যা কাটিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার কাজে আন্তরিক হতে হবে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৩তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, সমস্যা যতোটা তীব্রই হোক, সমস্যার আসল কারণ শনাক্ত করে সমাধানের চেষ্টা করলে সমাধান হতে বাধ্য। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কিছু স্বেচ্ছাসেবীর স্বেচ্ছারিতার কারণে দুর্নাম হচ্ছে। অনেকে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে কারো কারো কাছে হয়রানির শিকারও হচ্ছেন। ফলে স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মকা-ে নজরদারি বাড়াতে হবে। হয়রানি মেনে নেয়া যাবে না। কঠোর হাতে অনিয়ম দূর করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করতে এসে অর্থলিপ্সুতা মেনে নেয়া যাবে না। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে লোকবল নিয়োগ নিয়ে ওদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান মøান হয়ে যাচ্ছে মূলত দূষিত পরিবেশের কারণে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকট কাটাতে যেভাবে আর্থিকসহায়তা দেয়া হচ্ছে তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনে বাড়ানো হবে। পৌরসভাকেও বাড়তি দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য অপসারণে পৌরসভাকে নিয়মিত দায়িত্বপালন করা দরকার।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জনের পক্ষে সিনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন। স্বাগত বক্তব্য দেন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান। গত সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এএসএম ফতেহ আকরাম। গতসভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হলেও সিদ্ধান্তসমূহ পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা ও তার অগ্রগতি নিয়ে বিষদে আলোচনা করা হয়। বলা হয়, কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপনের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছিলো। ওই কমিটি কোন প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে নব উদ্দ্যোমে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতাল সড়কটি একমুখি করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে। বিশেষ করে গণপূর্ত বিভাগকে এ বিষয়ে এবং হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থার উন্নতি করতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিতে হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটি যতো দ্রুতসময়ে সম্ভব আড়াইশ বেডে উন্নীত করার লক্ষ্যে যা যা করার তার সবই করতে হবে। কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও বলেন, প্রতিদিনিই দু-তিনশ রোগী সর্দি কাশি নিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ করোনা উপসর্গে ভুগছে। পরীক্ষা করাতে তাদের অনেকেই আগ্রহী নন। যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং যাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ হচ্ছে তাদের নিজ নিজবাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি নেই। চুয়াডাঙ্গা জেলায় কোভিড-১৯ প্রতিষেধক টিকা করণে খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই নিচ্ছেন। বেশিরভাগই বুস্টার ডোজ এখনও নেননি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল হক, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুন্দর রাখার স্বার্থে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি যেভাবে আর্থিকসহ সার্বিক সহায়তা প্রদান করে আসছেন তা আমরা যে যেখানে রয়েছি সেখানে থেকে তথা নিজ নিজ স্থানে থেকে সহায়তার হাত বাড়ালে হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বাড়বে। পরিবেশও সুন্দর হবে। হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলসহ যা যা প্রয়োজন তা জানালে জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ে তা উপস্থাপন করা হবে।

সভায় বলা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ পথ্যের সংকট নেই। চাহিদা মতো সরবরাহ করা হয়, হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। মুক্ত আলোচনা পর্বে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মালিক, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, এপেক্স ক্লাব চুয়াডাঙ্গা সভাপতি আব্দুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্যে হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার দিক তুলে ধরেন। হাসপাতালের একটি কক্ষে ৪ জন অজ্ঞাত পরিচয়ের বৃদ্ধা রোগী প্রসঙ্গ উঠে আসে। এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও তাদের পরিবারের তরফে তেমন  কেউ নেয়ার আগ্রহী নন। ফলে চিকিৎসা দিয়ে পরিষ্কার পরিছন্নতা স্বাভাবিক রাখার কাজ দিন দিন জটিল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিষদে আলোচনা পর্বে সমাজ সেবা অধিদফতরের উপপরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ বলেন, হাসপাতাল সমাজ সেবা কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যদিও তা চহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সভায় নার্সিং প্রতিনিধি মোছা. ফেরদৌস আরা খাতুন রোকেয়া হাসপাতালের সার্বিক দিক তুলে ধরেন এবং সেবার মান নিশ্চিত করতে সকলে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান।

সভার সভাপতি সমাপনী বক্তব্যেও হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসকদের উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্লাড ব্যাংকসহ প্যাথলজি বিভাগে লোকবল সংকট কাটাতে প্রয়োজনে বেতন দিয়ে দক্ষ লোক নিযুক্ত করা হবে। কোনোভাবে বাড়তি টাকা কারো কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক পরিবেশে হাসপাতালের প্যাথলজিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সকলকে আগ্রহী করে তোলার আহ্বান জানান। ডা. ওয়ালিউর রহমান এক্স-রে প্যাথলজি বিভাগে রসিদ দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে সরকার নির্ধারিত ফি নেয়া হয়। যদি একটি বুথ করা সম্ভব হয়, তা হলে রোগী সাধারণের দুর্ভোগ বহুলাংশে লাঘব হবে। এসব বিষয়েও সভাপতি বাস্তবমুখি সকল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধির পুনঃপুনঃ আহ্বান জানান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More