বিয়ে-বিচ্ছেদ নিয়ে বিদ্রুপ ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কারণেই খুন করে নিহার: পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে বাবুর্চির ছুরিকাঘাতে নিহত চুয়াডাঙ্গার তন্ময়ের মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে তন্ময়ের মরদেহ নিয়ে রওনা দেন স্বজনরা। তন্ময় হত্যাকা-ের ঘটনায় ওইদিনই খুলশী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোটভাই এসএম আমিন উদ্দীন তমাল। হত্যাকা-ে জড়িত বাবুর্চি নিহার রিচিলকে মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া নিহার রিচিল (৫১) শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি থানার মায়াঘাসি গ্রামের খারিজ সাংমার ছেলে।
নিহত এসএম মঈন উদ্দীন তন্ময় (২৯) চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের বাজারপাড়ার (শেখপাড়া) এসএম কামাল উদ্দীনের ছেলে। চট্টগ্রামে ‘তিলোত্তমা চট্টগ্রাম’ নামে একটি টাইলস ও ফিটিংস প্রতিষ্ঠানে হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে করতেন তিনি।
গত সোমবার বিকেলে নিজেদের বাবুর্চির ছুরিকাঘাতে খুন হন তন্ময়। চট্টগ্রামের খুলশী থানার লালখান বাজারের চাঁনমারি সড়কের হাইপেরিয়ন ভবনের তৃতীয় তলায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত তন্ময়সহ তিলোত্তমা চট্টগ্রামের ছয় কর্মকর্তার থাকার ব্যবস্থা করেছিলো তিলোত্তমা চট্টগ্রাম। ওই কর্মকর্তাদের রান্নার কাজ করতেন বাবুর্চি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত করা নিহার রিচিল।
এদিকে, গত সোমবার তন্ময় নিহতের খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় স্বজনরা। নিহতের ছোটভাই এসএম আমিন উদ্দীন তমাল বলেন, মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। একমাত্র হত্যাকারী নিহার রিচিলকে মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সোমবার হত্যার ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে আটক করে।
সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দুপুরে তন্ময়ের মৃতদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। বুধবার ভোরে চুয়াডাঙ্গায় নিজবাড়িতে লাশ পৌঁছায়। সকাল ১০টায় জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, সোমবার তন্ময়ের মৃত্যুর খবর চুয়াডাঙ্গায় ছড়িয়ে পড়লে নেমে আসে শোকের ছায়া। একইসাথে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়। বন্ধুবান্ধব থেকে আত্মীয়স্বজনরা শোকে কাতর হয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোকের বহির্প্রকাশ ঘটে।
চট্টগ্রামের খুলশী থানা পুলিশ সোমবার জানায়, হাইপেরিয়ন ভবনের ৩য় তলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ছয় কর্মকর্তার থাকার ব্যবস্থা করেছিলো তিলোত্তমা টাইলস কোম্পানি। নিহার রিচিল ওই প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত বাবুর্চি। তিনিও ওই বাসায় একসাথে থাকতেন। সোমবার বিকেলে ওই বাসায় চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ভবনের লোকজন সেখানে জড়ো হন। সেখানে তন্ময়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লোকজন বাসায় ঢুকে দেখেন, নিহার দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে একটি ছোরার বাট। তখন নিহার তাদের জানায় যে, তিনি তন্ময়কে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছেন। ছোরা কোথায় জানতে চাইলে নিহারের জবাব- ছোরা পেটের ভেতর রয়ে গেছে। পরে পুলিশ গিয়ে রক্তমাখা ছোরার বাটটি (হাতল) উদ্ধার করেছে।
পুলিশ আরও জানায়, সোমবার দুপুরে তন্ময়সহ তিন কর্মকর্তা ভাত খাওয়ার জন্য বাসায় যান। দুজন ভাত খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী নিহার রান্নাঘর থেকে ছোরা এনে তার বুকের বাম পাশে ও পেটে আঘাত করে। তন্ময় বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও নিহারের শক্তির কাছে হার মানে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিহার রিচিলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের কারণ সম্পর্কে ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘বছর খানেক আগে নিহারের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। সেই ঘটনা নিয়ে নিহারকে বিদ্রুপ করতো তন্ময়। সম্প্রতি বান্দরবানের এক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীর সঙ্গে নিহারের সম্পর্ক হয়। সেটা নিয়েও তন্ময় তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করে। নিহারের বয়স, বিয়ে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অশ্ল¬ীল কথা বলতেন তন্ময়। তাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য নিহার খুনের পরিকল্পনা করে। এছাড়া রান্না ভালো না হওয়া নিয়েও বিভিন্ন সময় তন্ময় ওই বাবুর্চিকে বকাঝকা করতেন।’
নিহত তন্ময়ের পরিবার ও স্বজনরা জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার প্রদীপন বিদ্যাপীঠ থেকে স্কুলজীবন শুরু হয় এসএম মঈন উদ্দিন তন্ময়ের। এরপর ভি.জে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে। ২০১১ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকার ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় তন্ময়। সেখান থেকে বিবিএ শেষ করে তিলোত্তমা টাইলসে চাকরি শুরু করে। প্রথমে ঢাকায় চাকরি শুরু করে। এরপর চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন তন্ময়। তাহিয়া রুবাইয়াত নামে দুইবছর বয়সী কন্যাসন্তানসহ স্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় পরিবারের সাথে থাকতেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ