ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে তারই স্ত্রী : হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হেঁসো উদ্ধার
দামুড়হুদার ধান্যঘরায় দুদিনের মাথায় বাবর আলী হত্যার ঘটনা উন্মোচন : আজ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা উপজেলার ধান্যঘরায় ফল ব্যবসায়ী বাবর আলী হত্যার দুদিনের মাথায় ঘটনা উন্মোচন করেছে পুলিশ। ঘুমন্ত বাবর আলীর গলায় কোপ দিয়ে হত্যা করেছে তারই স্ত্রী মহিমা খাতুন। ঘটনার পর থেকে পুলিশের সন্দেহজনক নজরে ছিলেন মহিমা। শেষমেষ পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে খুনের স্বীকারোক্তি দেন। তার তথ্যের ভিত্তিতেই উদ্ধার করা হয়েছে বাড়িতে লুকানো হেঁসো ও রক্তমাখা শাড়ি। চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশের একাধিক কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুলিশ সুপার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই বাবর আলীর স্ত্রীর অসঙ্গত কথাবার্তা বলছিলেন। পরে থানা হেফাজতে রেখে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তিনি জানান, ঘটনার দিন দুপুরে বাবর আলীর খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন স্ত্রী মহিমা। রাতে আবারও ছেলে ও বাবর আলীর খাবারে মেশানো হয় ঘুমের ওষুধ। রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্বামীর বুকের ওপর উঠে হেঁসো দিয়ে গলায় একটি কোপ দেন। পরে ঠা-া মাথায় হেঁসো ও তার পরনের রক্তমাখা শাড়ি পরিবর্তন করে ঘরেই লুকিয়ে রাখেন। এরপর ছেলে মাহিনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানায় তার বাবাকে কেউ কুপিয়ে পালিয়ে গেছে। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কিছুক্ষণ পর বাবর আলীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দৃষ্কৃতীকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে বাবর আলীর মৃত্যুর পরই হাসপাতালে থাকা সংবাদকর্মীদের মহিমা খাতুন জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ে তিন ব্যক্তি বাড়িতে স্বামীকে খুঁজতে আসেন। সেই সময় আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। তারা মোবাইল নাম্বার চান। আমি মোবাইল দিতে না পারায় তারা চলে যান। রাতে আমি ও আমার ছেলে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার স্বামী বারান্দায় ঘুমোচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয়ে ওই ব্যক্তিরা বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে কুপিয়ে জখম করে। তিনি চিৎকার করলে আমি ও আমার ছেলে ঘর থেকে বাইরে এলে তারা পালিয়ে যান। বাবর আলীর সাথে কারো কোন দ্বন্দ্ব আছে কিনা জানতে চাইলে তার স্ত্রীর মহিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী বিভিন্ন বাগান থেকে লিছু ক্রয় করে স্থানীয় কার্পাসডাঙ্গা বাজারে বিক্রি করতেন। তার ভালো বেচাকেনা হতো বলে বাজারের অনেক ব্যবসায়ীরা তাকে ভালো চোখে দেখতেন না। এছাড়া আমার স্বামী কয়েকটি লিচু বাগান কেনা বাবদ চার লাখ টাকাও দিয়েছিলো। সেই টাকা ফেরত দিচ্ছিলো না তারা। চাইলে হুমকি ধামকি দিতো। কি কারণে, কে বা কারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে তা জানি না।
নিহত বাবর আলীর ছেলে মাহিন বলেন, রাতে আমার মা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। ফিরে এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে বলেন, তোর বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কে বা কারা মেরে ফেলেছে। এরপরই দ্রুত প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে তিনি মারা যান।
এদিকে দর্শনা থানা পুলিশের বিচক্ষণতায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার ঘটনা উন্মোচন করায় এলাকাবাসী সাধুবাদ জানিয়েছেন। কি কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন বাবর আলী তা আজ রোববার সকাল ১০টার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন দর্শনা থানায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।