ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় ভিন্নমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আপত্তি ইসির

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে মনে করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হবে। কিছু ধারা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আরেকটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে এবং অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ হবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভিন্নমত জানিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠনো হয়েছে। ভিন্নমত পোষণ নয় কি দশটা হবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রিয়াজকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে মতামত দেয়ার কারণই হচ্ছে ইসির ক্ষমতা খর্ব হওয়ার জন্য। খর্ব না হলে তো পাঠাতাম না। কমিশনের ভিন্নমত প্রকাশ করার সুযোগ আছে, সেখানে মতামত দিয়েছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন সংস্কার কমিশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কার্যকর করার জন্য ও নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৬টি ক্ষেত্রে ১৫০ সুপারিশ জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীকালে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছয়টি সংস্কারের কমিশনের প্রধানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, আইন সচিবকেও দেয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা ইসির অধীনে রাখাসহ মোট নয়টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ঐকমত্য কমিশনকে অনুরোধ করেছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কমিশন (ইসি) প্রতিহিংসার আশঙ্কায় শক্ত অবস্থান নিতে পারবে না। এছাড়া সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে স্বাধীন কমিশন গঠনের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশন চিঠিতে জানিয়েছে, ইসি নিজেই স্বাধীন এবং এটা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছে, এতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হবে।
এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাগণের মধ্য থেকে নিয়োগের বিষয়ে কমিশন বলছে, ইসির বিবেচনা অনুযায়ী সক্ষমতা ও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে অনুশীলন করে নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় চার মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে ইসি বলছে, এত কম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র নিজেদের অধীনে রাখার পক্ষে মতামত জানিয়েছে ইসি। সংস্থাটি চিঠিতে বলেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার জন্য আলাদা কমিশন গঠন না করে এটি নিবার্চন কমিশনে রাখার পক্ষে ইসি। এছাড়া আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে ইসি বলেছে, সশরীরে জমা দেয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও জমা দেয়ার বিধান রাখতে হবে, তা না হলে ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়েও নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে ইসি। সংস্থাটি বলছে, এটি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে।
সংস্কার কমিশন তার সুপারিশে বলেছে, কমিশন ফলাফল গেজেট প্রকাশের পূর্বে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটি ঘোষণা প্রদান করবে। এছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দল সংক্ষুব্ধ হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ করার সুযোগ সৃষ্টির বিধান করতে হবে। সাংবিধানিক কাউন্সিল/আদালত কর্তৃক সর্বোচ্চ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। এই সুপারিশে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এতে নির্বাচনকে অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চিঠির বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, এর প্রয়োজন নেই। ইসি সচিব বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণের যে ফর্মুলার কথা বলা হয়েছে, সেটি হলে শহর অঞ্চলে আসন বেড়ে যাবে। ইসি মনে করে, ভোটার সংখ্যা এবং আঞ্চলিক অখ-তা বিবেচনা করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা উচিত।
ইসি সচিব আরো বলেন, ভোটের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফাই করার বিষয়ে একটি সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এর প্রয়োজন নেই। কারণ ফলাফলের যে গেজেট প্রকাশিত হয়, সেটাই সার্টিফিকেশন। নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তাতেও ভিন্নমত রয়েছে। ইসি সচিব বলেন, রিটার্নিং অফিসার সন্তুষ্ট হয়েই ফলাফল ঘোষণা করেন। ভোটের পর তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে কমিশনারদের শাস্তির সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আপত্তি তুলে ধরে আখতার আহমেদ বলেন, এজন্য একটি ব্যবস্থা এখনই রয়েছে, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আছে। যদি নির্বাচন শেষ হওয়ার পাঁচ বছর দশ বছর পর নির্বাচন কমিশনারদের আদালতে দৌড়াতে হয়, সেটি কি যৌক্তিক হবে? নির্বাচনে জয়ী হবেন একজন, বাকিরা সংক্ষুব্ধ হয়ে যে কোনো অভিযোগই করতে পারেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More