কমছে তাপমাত্রা : বেড়েছে শীতের কাঁপুনি

দেশের বিভিন্ন স্থানে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস
স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে মধ্য ডিসেম্বরে এসে দেখা মিলছে শীতের। তাপমাত্রা কমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে শীতের কাঁপুনি। আগামী কয়েক দিন সেই কাঁপুনি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, আজ বুধবার শুরু হচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এটি এই মরসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক মঙ্গলবার রাতে জানান, আগামী তিন দিন সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা পাঁচ থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। এ আবহাওয়াবিদ বলেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। উর্ধ্বাকাশের শীতল বায়ু নিম্নগামী হওয়ায় রাতের তাপমাত্রা কমে যায় এবং শীতের অনুভূতি বাড়ে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন ছিলো তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তামপাত্রা ছিলো ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ৩০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্রমান্বয়ে কমে মধ্যরাতে গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পরে তা মঙ্গলবার ভোর ৬টায় তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৮। যা এই মরসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। তখন রাজশাহী, রংপুর ও এর আশেপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে বেয়ে যেতে পারে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে তাপমাত্রা কমবে রাজধানীতেও।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সূর্যের দেখা না মেলায় এখন তাপমাত্রার অনুপাতে বেশি অনুভূত হচ্ছে শীত। ঢাকাসহ এই কুয়াশা সারাদেশেই অব্যাহত থাকবে। এরপর কুয়াশা কমলে বাড়বে ঠা-া। বুধবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বর মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। তবে এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এ মাসের শেষার্ধে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে দুটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দেশের নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় চলতি সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ আসছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ও ৯টায় এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াম। চুয়াডাঙ্গায় অগ্রহায়ণের শেষে এসে শীত জেঁকে বসেছে। দ্রুত কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। উত্তর দিক থেকে আসা শীতল বাতাস শীতের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সন্ধ্যা নেমে আসার পরপরই শুরু হচ্ছে কুয়াশা। সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত কুয়াশার আধিক্য থাকছে প্রকৃতিতে। এ সময় সড়কে হেড লাইট জ্বেলে চলাচল করছে গাড়ি।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, সোমবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরও জানান, চলতি সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে এ জেলার ওপর দিয়ে। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে দুর্ভোগ বেড়ে গেছে মানুষের। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। দর্শনার দিনমজুর বাবর আলী বলেন, সকাণে কাজে বের হতে পারিনি। রোদ পোয়াচ্ছি। হাটে হাটে তালা-চাবি মেরামত করেন আকনাদবাড়ীয়ার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, শীতে সকালে সাইকেল চালিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হয়। তবুও পেটের ধান্দায় বের হতে হয়। বেগমপুরের হকার সাদেক আলী বলেন, সকাল ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। পুরোনো ভাংড়ি জিনিস কিনবো। কিন্তু শীতে সকাল সকার গ্রাম ঘুরতে কষ্ট হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে সাইকেল চালিয়ে ঝুরি ভাঁজা বিক্রি করেন লোকনাথপুরের আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, শীতে সকালে বের হওয়ায় কষ্ট। ইটভাটার শ্রমিক ঈশ্বরচন্দ্রপুরের তরিকুল বলেন, ভোরে কাজে আসতে হয়। কাঁদা-মাটির কাজ করতে হয। শীতে হাত-পা টালিয়ে (ঠা-ায় জমে যাওয়া) যায়। হাসপাতাল গুলোতে ঠা-াজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা.মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, প্রায়’শ খানেক শিশু ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন বর্হিবিভাগে দেড়’শ থেকে দু’শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More