আব্দুল্লা শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে : গভর্নিং বডি বাতিল
সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতসহ কলেজের ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার ঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা
পাঁচমাইল প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের তেঁতুল শেখ কলেজের চলমান গভর্নিং বডি বাতিল করেছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ড। কলেজ সভাপতি আব্দুল্লা শেখের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং কলেজের ৬০ লাখ টাকায় পরিবারের সদস্যদের নামে সঞ্চয়পত্র কেনার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গভর্নিং বডি বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়। গত সোমবার যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক স্বাক্ষরিত একপত্রে এ নির্দেশনা হয়। একইসাথে পরবর্তি গভর্নিং বডি গঠনের লক্ষে এডহক কমিটি গঠন করার জন্যও পত্রে বলা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল ইসলামকে গালিগালাজ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন সভাপতি আব্দুল্লা শেখ। গত ১৪ জুন অধ্যক্ষ-শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ ও গালাগালির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অভিযুক্ত সভাপতির পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামেন কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা গত ১৫ জুন সভাপতির অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে।
এছাড়া কলেজ সভাপতি আব্দুল্লা শেখ নিয়ম বহির্ভূতভাবে কলেজের ফান্ড থেকে ৬০ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়ে নিজের নিকটাত্মীয়দের নামে ব্যাংকে রেখেছেন। সভাপতি কলেজের ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই অধ্যক্ষকে চেক সই করতে বাধ্য করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ জুন কলেজের একাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। ওইদিনই সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সরোজগঞ্জ শাখায় সভাপতি আব্দুল্লা শেখের মেয়ে ফারহানা ইয়াছমিন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা, বড় ভাইয়ের পূত্রবধু আছিয়া খানম ও আর্জিনা রহমানের নামে ১৫ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা হয়।
এদিকে, অধ্যক্ষ-শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ ও গালাগালির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এবং অভিযুক্ত সভাপতির পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়। গত ৩০ আগস্ট যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ড বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া গত ২৪ আগস্ট অশোভন আচারনকারী সভাপতির বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য বলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত সোমবার তেতুল শেখ কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর পত্র প্রেরণ করে শিক্ষাবোর্ড।
পত্রে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তেতুল শেখ কলেজের চলমান গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুল্লা শেখের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল ইসলামকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন এবং কলেজ থেকে ৬০ লাখ টাকা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নামের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা এবং জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসককে বলা হয়। জেলা প্রশাসকের পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে উপযুক্ত অভিযোগের সত্যতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাছাড়া কলেজ থেকে ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করে সভাপতি আব্দুল্লা শেখ তার পরিবারের সদস্যদের নামে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন। তার লভ্যাংশ দিয়ে কলেজ পরিচালনা করার বিষয়ে কমিটির রেজুলেশন আকারের সিদ্ধান্ত বলে স্বীকার করেছেন সভাপতি আব্দুল্লা শেখ। এক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করার জন্য কেবল সভাপতি একাই দায়ী নয় বরং এ ধরনের এখতিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে সভাপতিসহ সকল সদস্য আইন লঙ্ঘন করেছেন। তার দায়ভার কমিটির সভাপতিসহ সকল সদস্যের ওপর বর্তায়।
এমতাবস্থায় চলমান গভর্নিং বডির সভাপতি জনাব মো. আব্দুল্লা শেখের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গা কর্তৃক প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহাতীভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং কলেজ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে, তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নামে সঞ্চয় পত্র ক্রয় করে,তার লভ্যাংশ দিয়ে কলেজ পরিচালনা বিষয়ে কমিটি রেজুলেশন আকারে এখতিয়ার বহির্ভুত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এস, আর, ও নং ১৫৩ /আইন/২০৯৯ এর ৩৮ ধারায় সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করায় চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর উপজেলাধীন তেঁতুল শেখ কলেজের চলমান গভর্নিং বডি বাতিল করা হল, পরবর্তী গভর্নিং বডি গঠনের লক্ষ্য এডহক কমিটি গঠনের অনুমতি প্রদান করা হলো।