স্টাফ রিপোর্টার: ঈদের পর নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে আলু, পেয়াজ ও চিনির বাজারে। কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বিক্রেতারা বরাবরের মতো সরবরাহ সংকটকে দায়ী করলেও ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের নজরদারি না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারাই সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।
পাইকারি বাজারে ক’দিন আগেই যেখানে আলুর দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা আর পেয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা সেখানে এখন আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং পিয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এর দর যেন লাগামহীন। অন্যদিকে ১০ দিনের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। যেখানে ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। ওদিকে খোলা চিনি কিছুটা পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না বাজারে। নতুন করে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বাজারের হিসাব মিলাতে পারছেন না তারা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে বাজারে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তবে মিল মালিকরা বলছেন, দেশে চিনির কোনো সংকট নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ায় দাম বাড়তি বলে জানান তারা। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন। চিঠিতে মিল মালিকরা উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনি আমদানি নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। এ সময় বেশ কয়েকটি দোকানে চিনি নেই বলে জানান বিক্রেতারা।
তারা জানান, চিনির সরবরাহ না থাকায় তারা চিনি বিক্রি করছেন না। যেসব দোকানে চিনি বিক্রি হচ্ছে, তারা ঈদের আগে এসব চিনি কিনেছিলেন। বর্তমানে দু-একজন বিক্রেতা চিনি পেলেও অধিকাংশ বিক্রেতা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না।
তবে মিল থেকে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের। সংগঠনটির মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমরা বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া সংগঠনটির ওই চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ৬৭৫ ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ ডলার। এই বাস্তবতায় চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে ভয়ে আছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, বর্তমান দামে চিনি আমদানি করলে তাতে প্রতি কেজিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১৩১ টাকা।
ওদিকে সরবরাহ সংকটের কারণেই আলু ও পিয়াজের দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছেন। ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন বলেন, দাম বৃদ্ধি করেন বড় ব্যবসায়ীরা। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং পিয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে কথা হয় বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। এর মধ্যে অনেকেই ক্ষোভ জানান ব্যবসায়ীদের ওপরে। তারা বলেন, সবকিছুই চলে গেছে সিন্ডিকেটের আন্ডারে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো সবকিছুর দাম বাড়ান। সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের এই অভিযোগের বিষয়ে একমত হয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, এখন বাজারে এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। বাজারে পণ্যের সরবরহে ঘাটতি নেই। বিশ্ববাজারেও এখন পণ্যের দাম বাড়েনি। শুধু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন। এদেরকে আইনের আওতায় আনা দরকার। একইসঙ্গে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা দরকার।