মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: কূটনীতিকের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার অর্থ দাবি করেছেন মেঘনা আলম-এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি মডেল থানা মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে ওই কূটনীতিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। নথিপত্র বলছে, চাঁদাবাজি-প্রতারণার অভিযোগে ১৫ এপ্রিল ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম বাদী হয়ে মেঘনা, সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে। প্রতারণার ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেঘনা আলম ও দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২-৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের ফার্মের মালিক। এছাড়া ইতোপূর্বে মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল তার। সুন্দরী, আকর্ষণীয় ও স্মার্ট মেয়েদের তার প্রতিষ্ঠানে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে অসৎ উদ্দেশ্যে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় ও অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কূটনীতিককে টার্গেট করে ব্লাকমেইল করে বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করে এবং আদায় করে থাকে। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় একটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে মেঘনা, সমিরসহ কয়েক ব্যক্তি অংশ নেন। বৈঠকে কূটনীতিকের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি ও আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এই গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেল করে অর্থ আদায় করা। আসামিদের এই কার্যক্রমের কারণে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা পেনাল কোডের ৪২০, ৩৮৫ ও ১০৯ ধারার অপরাধ। এদিকে, এই মামলায় মডেল মেঘনাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন বৃহস্পতিবার মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। ভাটারা থানায় করা আরেকটি চাঁদাবাজির মামলায় গত ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন মেঘনার পরিচিত ব্যবসায়ী সমির। এই মামলায় তাকে ১২ এপ্রিল পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বৃহস্পতিবার এ মামলায় মেঘনাকে গ্রেফতার দেখানোর পক্ষে শুনানি করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, এই আসামিরা অভিনব কৌশল অবলম্বন করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ অ্যাম্বাসিগুলোতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের হানি ট্র্যাপে ফেলে বিপুল অর্থ বাগিয়ে নেয়ার জন্য চক্র দাঁড় করিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতারণা করে আসছেন। সবশেষ সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এবং তার কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় মেঘনা আলমকে তিনি মেঘলা আলম সম্বোধন করেন। শুনানির একপর্যায়ে মেঘনা তার নাম সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে বলেন। এরপর বিচারক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আছেন কিনা জানতে চান। মেঘনা আদালতকে বলেন, কোনো আইনজীবী নেই। তিনি নিজেই কথা বলতে চান। আদালত অনুমতি দিলে মেঘনা বলেন, আমার নাম মেঘনা, মেঘলা নয়। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথা বলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন যে কেউ চাইলেই কি সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করতে পারেন? আপনারা কি তার কাছে যেতে পারবেন? বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে মামলা সম্পর্কে কিছু বলার আছে কিনা জানতে চান। এরপর মেঘনা বলেন, আমাকে বিনা বিচারে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে কোনো আইনজীবী পাবেন না। বিষয়টি হচ্ছে রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার একমাত্র সম্পর্ক, আর কারো সঙ্গে না। তিনি দাবি করে বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ঈসা অভিযোগ করেন, আমি নাকি তার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি। এটা মোটেও সত্য না। এ বিষয়ে আমি ঈসার সঙ্গে কথা বলি। তাকে এসব তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলি। এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজির সঙ্গে কথা বলি। এরপরেই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। মেঘনার পর আদালতে কথা বলেন সমির।
উল্লেখ্য, ৯ এপ্রিল রাতে মেঘনাকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী, পরদিন বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে আদালত মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন। তিনি এখন কারাগারে। উল্লেখ্য, মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More