‘সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা’

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নিজেই গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন। তার সরাসরি নির্দেশে গুম ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন সব ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অধ্যাপক ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই বিপ্লবের ওপর একটি প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর প্রতিনিধি দলটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এইচআরডব্লিউর এশিয়া প্রধান বলেন, ‘আপনারা এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি করেছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সময়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে।’ এইচআরডব্লিউ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্ত করার সুপারিশ তুলে ধরে বলেছে, গুম ও হত্যার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। তিনি বলেন, ‘এখানে জবাবদিহিতা থাকা জরুরি।’ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের যে প্রচেষ্টা ছিল- তার প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত ১৬ বছর আপনাদের প্রতিবেদনগুলোতে ১৬ বছরের একনায়ক শাসনামলের ব্যাপক অপরাধ উন্মোচনে সহায়ক হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, র‌্যাব তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ‘বিচারের মুখোমুখী হতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।’ পিয়ারসন বলেন, ‘২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং তারা শাসক দলের ক্যাডারের মতো আচরণ করত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সমস্ত সংস্কার সুপারিশ প্রকাশ করছি এবং জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নির্ধারণের সুযোগ দিচ্ছি। ১৬ বছরের দমন-পীড়ন এবং অপরাধের ক্ষতি পূরণ করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হবে।’ এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনা বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া প্রধান ঢাকা সফরকালে সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন। এইচআরডব্লিউ বলেছে, সংস্কারগুলোকে দৃঢ় করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে যথাযথ নজরদারির আওতায় আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি রাখাইনে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার রোহিঙ্গার জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ‘নিরাপদ অঞ্চল’-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More