স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক অন্দরমহলে আলোচনা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি কেমন হবে? নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। তারা নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে অনড় থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ না-ও নেয়, তবু সংবিধানের বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেবে না ক্ষমতাসীনরা।
দলটির আশা: দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে বিএনপি দাবি নিয়ে অনড় থাকলেও সময়মতো সংবিধান অনুযায়ী ভোটে অংশ নেবে। কারণ ২০১৪ সালে যে ভুল করেছিল তার খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে দলটিকে। তাই সেই ভুল পথে পা বাড়াবে না তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ফোরামের নেতারা বলছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যত ধরনের সুবিধা দেওয়া যায় বা তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার সুযোগ আছে তা মানা হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মানা হবে না। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে, সরকার সহায়তা করবে মাত্র। এদিকে নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো প্রভাব যেন না থাকে সে বিষয়েও কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ সরকার। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা করবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, কোনো দলেরই সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে সংবিধান মেনেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।’ সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে বলছেন, আওয়ামী লীগের মিষ্টি কথার ফাঁদে এবার বিএনপি পা দেবে না। তাদের দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তবে বিএনপির দাবি-দাওয়া বা তাদের বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত নন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপি সময় হলে নির্বাচনে আসবেই। আর নির্বাচনের যেহেতু অনেকটা সময় বাকি আছে তাই এখনই বিএনপির বিষয়ে বিশেষ কোনো চিন্তা করার কারণ নেই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধানাবলি অনুযায়ী জাতীয় সংসদের মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ বহাল থাকাবস্থায় বর্তমান সরকারের অধীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সে হিসেবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে এখনো নির্বাচনের ১৫ মাস বাকি। বর্তমান সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা সংবিধানের বাইরে কোনো পদ্ধতিতে যেতে নারাজ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার সহায়তা করবে। এখন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিদিন নির্বাচন নিয়ে কথা বলার অর্থ হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে ইস্যু বানিয়ে কথাবার্তা বলে। বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়া বিএনপির রাজনৈতিক দীনতার বহিঃপ্রকাশ।’ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি এখন যতই মাঠ গরম করুক, যথাসময়ে তারা নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে না আসার মতো ভুল তারা বারবার করবে না। তারা দরকষাকষি হিসেবে নির্বাচনে না আসার বক্তব্য দিচ্ছে। বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হবে। এর বাইরে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগকে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধানের আলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। বিএনপি অনেক কথাই বলে। তারা নির্বাচনে আসবে না, আবার নির্বাচনে আসার নাম করে মনোনয়ন বাণিজ্য করবে, এটা তাদের দলের অতীত কর্মকা-। বিএনপি নেতাদের হুমকি এবং রাজপথে ফয়সালা করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও করতে চাইলে শক্ত হাতে তাদের প্রতিহত করা হবে।