ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে পৌনে ৭শ ভুল

মাউশির সার্কুলার আজ : সংশোধনী পাওয়া যাচ্ছে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রবর্তিত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সব মিলিয়ে পৌনে ৭শ ভুল ধরা পড়েছে। এনসিটিবি চিহ্নিত এসব ভুল শুক্রবার ছুটির দিনে প্রকাশ করেছে। ঈদের ছুটি শেষে আজ সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খুলছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিহ্নিত ভুলগুলো মাথায় রেখেই শিক্ষকদের আজ থেকে পাঠদান শুরু করতে হচ্ছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এনসিটিবির কাজ মূলত পাঠ্যবই ও শিক্ষাক্রম তৈরি। এগুলো পড়ানোর দায়িত্ব মাউশির। ভুল চিহ্নিত করে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে (িি.িহাঃন.মড়া.নফ) প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি মাউশিকেও জানানো হয়েছে। তারা এখন এই সংশোধনী অনুযায়ী পাঠদানের ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও জানান, ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে সুধী মহলের সুপারিশ, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ আমলে নিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি অধিদপ্তর। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) স্কুল এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিএমই) মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ভুলগুলো আমলে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে আজ নির্দেশনা পাঠানো হবে। প্রধান শিক্ষকদের নেতৃত্বে শিক্ষকরা এই কাজ সম্পন্ন করবেন। শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নের অংশ হিসাবে জানুয়ারিতে নতুন এ পাঠ্যবই প্রবর্তন করা হয়। এরপরই এসব বই নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বিশেষ করে পাঠ্যবইয়ে মানুষের সৃষ্টি তত্ত্ব, পর্দা, সমকামিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক আর সমালোচনা শুরু হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তদন্তের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩১ জানুয়ারি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিলো বিশেষজ্ঞ কমিটি আর অপরটি প্রশাসনিক কমিটি। পাশাপাশি বিতর্কের মুখে ১০ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যবই দুটি প্রত্যাহার করে নেয়।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের উল্লিখিত দুটি কমিটিই ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি পাঠ্যবই থেকে বিবর্তনবাদ বাতিল এবং বিভ্রান্তি এড়াতে বেগম রোকেয়ার অবরোধবাসিনী প্রবন্ধটি পুরোটা অন্তর্ভুক্তিসহ ৩০টি সুপারিশ করেছে। এনসিটিবির প্রকাশিত সংশোধনীতে দেখা গেছে, অবরোধবাসিনী বাদ দেয়া হয়েছে। তবে মানুষ সৃষ্টি সংক্রান্ত অংশটি রয়েছে। এছাড়া কিছু নাম পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আরও দু-একটি গল্প যুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত দু-চারটি বিষয় নিয়েও এখন বিতর্ক উঠতে পারে।

মোট চারটি পিডিএফ ফোল্ডারে সংশোধনীগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের আলাদা সংশোধনী দেয়া আছে। পাশাপাশি কোন পৃষ্ঠার কোন লাইনে বা প্যারায় ভুলগুলো আছে, কী ভুল এবং সঠিক কী হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি করণীয় সম্পর্কে মন্তব্যও রয়েছে। যেমন নতুন সংশোধনীতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন’ বইয়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফুটনোটে বলা হয়েছে, অনুশীলন বইয়ে যে যে স্থানে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ অথবা রিসোর্স বই দেখতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সে সে স্থানে শিক্ষকের সহায়তায় বা উপযুক্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। সব বিষয় মিলিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনে ৩৮টি আর বাংলা ভার্সনে ৩৩৫টি ভুলের সংশোধনী দেয়া হয়েছে। আর সপ্তম শ্রেণির বাংলা ভার্সনে ২৪১টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ৬১টি ভুল সংশোধন করা হয়। এতে দেখা যায়, গোটা পাঠ পরিবর্তন বা সংশোধন করা হয়েছে খুব কমই। বেশিরভাগ সংশোধনী দেখা গেছে বাক্য, শব্দ ও বানানের ক্ষেত্রে। এছাড়া ব্যাকরণ এবং গণিতে যোগ-বিয়োগের বা সমস্যা উপস্থাপনসংক্রান্ত দিকও রয়েছে। পাশাপাশি আছে ছবির ব্যবহার, পুনরাবৃত্তি ইত্যাদির সংশোধনী।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি করে বিষয় আছে। তবে বিভিন্ন ধর্মের আলাদা পাঠ্যবই থাকায় একেক শ্রেণিতে মোট বই রয়েছে ১৩টি করে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১টি এবং সপ্তম শ্রেণির ১২টি বইয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। এর আগে নবম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞানসহ ৩ বইয়ের ওপরও সংশোধনী প্রকাশ করা হয়েছিল।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More