স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ থেকে নেতা-কর্মীদের নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, ইতোমধ্যে রাজপথ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এ আন্দোলনে সবাইকে শামিল হতে হবে। গতকাল বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মাদরাসা ময়দান-সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশের মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। সবাই প্রস্তুতি নিন। এ সরকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না। রাজপথেই এর ফয়সালা করতে হবে।’ টুকু বলেন, দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। শুধু ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। তাহলে রাঘববোয়ালরা কতো টাকা পাচার করেছেন তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে।’ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ ঢাকা থেকে আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে।’ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো ভোট হবে না। এ দেশের মানুষ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো ভোট চায় না। সমাবেশের কারণে সরকার ট্রেনও বন্ধ করে দিয়েছে। যানবাহন আটকে মানুষের স্রোত কি বন্ধ করা গেছে? মানুষ হেঁটে হেঁটে বিএনপির সমাবেশে এসেছে। পরে বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। ইশরাক বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ একটা সুন্দর পরিবেশ থাকার কথা ছিলো। তার বদলে আমাদের আন্দোলনের বার্তা নিয়ে রাজশাহী আসতে হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।’ তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজ জাতীয় ভোটার দিবস। অথচ মানুষ ভোটই দিতে পারে না। আমরা এমন অবস্থা চাই না। সে কারণে আন্দোলনের আর কোনো বিকল্প নেই।’ সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, হারুনার রশিদ এমপি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। এছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল হক প্রামাণিক, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগরী বিএনপি সভাপতি, সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগরী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী অংশ নেন।
সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও তারা বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশে আসেন। দুপুরের পর থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন তারা। পথে পথে পুলিশের সদস্যরা সন্দেহভাজনদের শরীর তল্লাশি করে। সমাবেশ ঘিরে রাজশাহীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অত্যন্ত সতর্কাবস্থায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জলকামান, এপিসি যান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি করে গাড়ি।
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরুর পরপরই হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে সিরাজগঞ্জের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ হাতাহাতি ঘটে। ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার নেতাদের বক্তব্য শুরু হয়।
রাজশাহীর মহাসমাবেশে আসার পথে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। গতকাল ঢাকা থেকে রাজশাহীর সমাবেশস্থলে আসার পথে রাজশাহীর পুঠিয়ায় পুলিশ তার গাড়িবহর আটকায় এবং তাকে সমাবেশে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাবিথ আওয়াল সমর্থকদের বাগবিত-া হয়। পরে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে তিনি সমাবেশস্থলে আসেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘ওপরের আদেশে তারা (পুলিশ) এমনটা করেন। তারা আমাকে আটকে রাখতে পারেননি।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ