স্টাফ রিপোর্টার: আগামী সংসদ ভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তির মধ্যেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নয়, ভোটার উপস্থিতিকে জোর দিচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। রেওয়াজ অনুযায়ী ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এরপরই আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনায় কমিশন সদস্যদের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের তাগিদ থাকলেও নির্বাচন পেছানোর পরিকল্পনা আপাতত নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। কমিশন থেকে যে সময়ের মধ্যে তফশিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের কথা জানানো হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রার্থীর মনোনয়নপত্রসহ বেশিরভাগ সরঞ্জাম জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। ক্রয় প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড এখনো ইসির হাতে আসেনি। শেষ হয়নি নির্বাচনি ম্যানুয়েল মুদ্রণের কাজও। দ্বিতীয় ধাপে দেশীয় পর্যবেক্ষক নিবন্ধন কাজও শেষ হয়নি। তবে এসব পণ্যের জন্য তফশিল ঘোষণা আটকে থাকবে না ইসির। দ্রুতই কাজগুলো শেষ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে তফসিল এবং জানুয়ারির প্রথমদিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, কেউ শব্দটা ব্যবহার করছেন পারটিসিপেটরি, কেউ ব্যবহার করছেন ইনক্লুসিভ। পারটিসিপেটরি বলতে আমি যেটা বুঝেছি ব্যাপক ভোটার যদি এসে ভোটদান করে। কে এলো, কে এলো না আমরা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব না। গত ৪ নভেম্বর ২৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল। ১৮টি দল অংশ নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে কমিশন ভোটার উপস্থিতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। এদিকে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে ইসি। এছাড়াও সম্ভাব্য রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনায় কমিশন সদস্যদের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। পাঁচ সদস্যের কমিশনের অন্তত দুজন সদস্য এই পরিকল্পনায় একমত হতে পারেননি। জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তবে ভোটের তফসিল কবে ঘোষণা করতে হবে, এ বিষয়ে আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগের সব নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার দিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা পরবর্তী সময়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে একটি প্যানেল প্রস্তুত করে ঐ প্যানেল থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন। আরিপওতেও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২) ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা রয়েছে। এবারে ইসির পরিকল্পনায় ছিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করার জন্য তাদের ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেয়া হবে। তারপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ১৩ অথবা ১৪ নভেম্বর হতে পারে। তবে গত রবিবার এ বিষয়ে সিইসির কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ইসি মো. আলমগীর এবং আনিছুর রহমান দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের মতে, তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগের বিষয়ে একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সভার এক পর্যায়ে আনিছুর রহমান সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। পরে ইসি সচিব নিজেই বিষয়টি নিয়ে সব কমিশনারদের কক্ষে গিয়ে সরাসরি দেখা করেন এবং সিইসির সঙ্গে কমিশনার আনিছুরের মধ্যে দূরত্ব ঘোচানোর জন্য অন্য দুই কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যদিকে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণের মধ্য দিয়ে ভোটের তপসিল ঘোষণা করবেন সিইসি। শুধু ব্যালট ছাপানোই এখন বাকি রয়েছে, যাকে ভোটের সর্বশেষ ধাপ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমার পরই ছাপানো হয়ে থাকে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনো কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা না গেলেও শেষ পর্যন্ত সংবিধানে দেখানো পথেই হাঁটবে আউয়াল কমিশন। সেক্ষেত্রে কোনো দল নির্বাচনে না এলেও তাদের কোনো কিছু করার থাকবে না। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের পরিস্থিতি সব সময় শতভাগ অনুকূলে থাকে না। তবুও সাংবিধানিক দায়িত্ব ও শপথের কারণে নির্বাচন কমিশনকে ভোট আয়োজন করতে হবে।
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই মেরুতে রয়েছে। সিইসিও বলে আসছেন, নির্বাচনের প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছে। দলটির অনেক নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। হরতাল-অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। একইভাবে বিএনপির সমমনা বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলও নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের দাবিতে অনড় এসব দল। এ অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দিয়ে আসছে। যদিও প্রকাশ্যে সংলাপের উদ্যোগ এখনো কেউ নেয়নি। এ কারণে নির্বাচন কমিশনও নির্দিষ্ট সময়েই ভোট করতে চায়। কমিশন মনে করে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই। সংবিধান অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.