বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার সুফল মিলছে না দেশের বাজারে

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনে ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনে ভোগান্তি বেড়েছে। অনেকে আশায় ছিলেন, বাজেটে তাদের ভোগান্তি কমাতে কোনো কিছু থাকবে। কিন্তু আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমানোর তেমন উদ্যোগ নেই, বরং বাজেটের কিছু কর প্রস্তাব তাদের বাড়তি চাপে ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, যা খরচ বাড়াতে বাধ্য করবে। এই মুহূর্তে সবার প্রধান সমস্যা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বিশ্ববাজারে কিছু নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশের বাজারে বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। আবার বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম যে হারে কমেছে, দেশের বাজারে সে হারে কমেনি। দু-একটি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে বাড়তি। ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স’-এর সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে আটটি পণ্যের বিষয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এজন্য দায়ী মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার-সংকট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় চিনি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যদিও দেশে পণ্যটির উৎপাদন চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ। আর দেশের পেঁয়াজচাষিদের সুরক্ষা দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় পণ্যটি আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দিতে দেরি করেছে, যার সুযোগ নিয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। দেশে পণ্যবাজার ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত ও নীতিগত দুর্বলতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে গমের দাম কমেছে প্রতি টনে ৩৫ শতাংশ। অথচ দেশের বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ২৫ শতাংশ এবং খোলা আটার দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে চিত্রটি একই। মসুর ডালের দাম বিশ্ববাজারের চেয়ে কম হারে কমেছে দেশে। অপরিশোধিত চিনির দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। কিন্তু দেশের বাজারে বাড়ার হার দ্বিগুণের কাছাকাছি ৫৮ শতাংশ। আদার দাম বিশ্ববাজারে ১৭২ শতাংশ বাড়লেও দেশের বাজারে বেড়েছে ২২২ থেকে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ৪৪ শতাংশ কমলেও দেশের বাজারে খোলা তেলের দর কমেছে ২ শতাংশ। আর পাম তেলের দাম বিশ্ববাজারে ৪৯ শতাংশ। দেশে পণ্যবাজার ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত ও নীতিগত দুর্বলতা রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার তদারকিতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও জনবলের ঘাটতি থাকায় দেশব্যাপী তদারক কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। আর বিভিন্ন পর্যায়ে কেনাবেচার কোনো নথি (রেকর্ড) সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। বাজারে রয়েছে যথাযথ প্রতিযোগিতার ঘাটতি। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) যে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করছে, তা আন্তর্জাতিক উৎসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটা মোট মজুতে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে না। এ কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভূমিকা রাখলেও তা প্রভাব তৈরি করতে পারছে না বাজারে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত মে ২০২৩ পর্যন্ত ১১ মাসে আট পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি এবং উদ্বৃত্ত বা ঘাটতির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর মধ্যে ভোজ্যতেল, রসুন, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি। ঘাটতি রয়েছে চিনি, আদা ও গমের। তবে গম ছাড়া অন্য দুই পণ্যের ঘাটতির পরিমাণ বেশি নয়। গমের বার্ষিক চাহিদা ৭০ লাখ টন ধরে ১১ মাসের চাহিদা দাঁড়ায় ৬৪ লাখ ১৬ হাজার টন। এ সময়ে ১০ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে দেশে। আর আমদানি হয়েছে ৩০ লাখ টন। ফলে সরবরাহ হয়েছে ৪০ লাখ টন। আর ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ১১ হাজার টন। আদার ঘাটতি ৭৭ হাজার টন। চীন আদা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। চিনি আমদানি কম হয়েছে ৭২ হাজার টনের মতো। সব দোষ যুদ্ধের ওপর চাপানোর সময়টা পার হয়ে গেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশই অসুবিধায় পড়েনি। অন্যান্য দেশে এখন মূল্যস্ফীতি কমছে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পারছে না। এজন্য সমস্যার মূল কারণগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে দ্রুত সেগুলো সমাধান করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More