বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ : আজ সারাদেশে হেফাজতের হরতাল
হেফাজতের বিক্ষোভে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে নিহত ৫ : আহত ৫০
স্টাফ রিপোর্টার: হেফাজতে ইসলামের ডাকা রোববারের (আজকের) হরতালের সমর্থনে শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫জন মারা যান। এছাড়া ২০ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশত জন আহত হয়েছেন। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুক্রবার সংঘর্ষে ৫জনের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতের আমির আল¬ামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এদিকে ঢাকার মালিবাগে দুপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া এলিফেন্ট রোডে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সহিংস ঘটনার পর ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। পরিবহণ সংকটে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শুক্রবারের সংঘর্ষের পর শনিবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকা ছিলো উত্তপ্ত। উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। হরতালের সমর্থনে হেফাজতের বের করা বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে ২০ পুলিশসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। শনিবার বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুরে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী মহাসড়কে অবস্থান করেন। এ সময় পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা তাদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আহতদের আনা হলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল¬াহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই পাঁচজন মারা গেছেন। সবাই গুলিবিদ্ধ ছিলো। আহতদের সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিহতরা হলেন-সুহিলপুর ইউনিয়নের হারিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে ওয়ার্কশপের দোকানি জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে শ্রমিক বাদল মিয়া (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২), ভূধল গ্রামের আলী আহমদের ছেলে কাউসার (২০) ও মাদ্রাসার ছাত্র জুবায়ের (১৪)।
এদিকে শনিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টিএ রোড দিয়ে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা এলাকা অতিক্রম করার সময় পেছন দিক থেকে মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্রকে ধাওয়া করে। এ সময় ছাত্ররাও পালটা ধাওয়া দেয়। তখন অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিছুক্ষণ পর মাদ্রাসাকে রক্ষার জন্য কান্দিপাড়া মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হলে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে পড়ে। তখন ছাত্রলীগ কর্মীরা পিছু হটে। ক্ষুব্ধ লোকজন প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তা-বের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে কয়েকশ নেতাকর্মী বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সিঁড়িতে অবস্থান নেয়। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী, ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ। তারা বলেন, রোববারের (আজ) হরতালে বাধা দিলে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। আমরা মাঠে থাকব। কোনো অফিস-আদালত খুলবে না। গাড়ির চাকা ঘুরবে না। এদিকে শনিবার বিকালে রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল¬ামা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বায়তুল মোকাররমে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে পুলিশ বক্সের সামনে কে বা কারা তুরাগ পরিবহণের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। বাসে আগুন দেখে আতঙ্কে যাত্রীরা জানালার কাচ ভেঙে লাফিয়ে পড়ে। এতে কয়েকজন সামান্য আঘাত পান। হাতিরঝিল থানার এসআই আব্দুল আলীম জানান, এটা নাশকতা না দুর্ঘটনা, এ ব্যাপারে তদন্ত করছে পুলিশ। উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন মালেকা বানু স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে হেফাজত বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা নাজমুল হাসান। হরতালে সমর্থন জানিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন।
বাবুনগরীর বিবৃতি : শনিবার এক বিবৃতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আন্দোলনরত তৌহিদি জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করায় পাঁচজন শহিদ হয়েছে। গুলি ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে প্রায় চারশ প্রতিবাদী তৌহিদি জনতাকে আহত করা হয়েছে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা বরদাশত করা যায় না। তবে হরতালে বাধা দেওয়া হলে সরকার পতন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। ঢাকায় বাস-মিনিবাস চলবে : হরতালে ঢাকা শহর, শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে বাস ও মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। শনিবার এক বিবৃতিতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, হরতালে বাস চলাচলে যাতে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করা না হয়, সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জেরদার করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।
চুয়াডাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে চুয়াডাঙ্গা ওলামা পরিষদ। গতকাল শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা উলামা পরিষদের আয়োজনে কেদারগঞ্জ বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে কোর্ট মোড় এলাকায় শেষ হয়। সেখানেই আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সভার। এর আগে মিছিল বের করার সময় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। প্রতিবাদ সভায় সংগঠনের সভাপতি মুফতি জুনাইদ আল হাবিবী বলেন, ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, যাত্রাবাড়ি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী মুসুল্লিদের ওপর পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডারবাহিনী হামলা করে পাঁচজনকে শহীদ করেছে। অসংখ্য মুসুল্লিকে আহত ও গ্রেফতার করেছে। মাদরাসা ছাত্রদেরকে পাখির মতো গুলি করে শহীদ করার মাধ্যমে আজ মনে হচ্ছে যেনো স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সমস্ত জনগণ একটি গোষ্ঠির কাছে পরাধীন হয়ে পড়েছে। এই পরাধীনতার শিকল থেকে আমাদেরকে বের হতে হবে। দেশের স্বার্থে ওলামাকেরাম কাজ করে যাবেন। কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না। তিনি আরও বলেন, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ আগামীকাল (আজ) সকাল সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। হেফাজত ইসলামের এই হরতাল চুয়াডাঙ্গা উলামা পরিষদ সমর্থন করে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুস্তাফা কামাল কাশেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান ও অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আ. সামাদ প্রমুখ। এসময় জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের নেতাকর্মীসহ জেলার সকল মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।