টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জে আহত ৬০ : আটক অর্ধশতাধিক
স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৬০ জন আহত এবং অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১টার দিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিএনপি সম্প্রীতি সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। ১০ মিনিটের এই সংঘর্ষে মুহূর্তেই ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। তারা প্রতিবাদ জানাতে একটা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শান্তিপূর্ণ র্যালি নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত যাওয়ার কর্মসূচি ছিল। আমরা আগে চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সকাল থেকেই নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার শুরু করে। মিছিলে অতর্কিত হামলা করে পুলিশ। ৬০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ মতিঝিল জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, বিএনপির সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি। তাদের মিছিলের অনুমতি ছিল না। তবু তারা মিছিল করছিল। মিছিল থেকে বিএনপিই পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাদের ধাওয়া দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের অন্তত ছয় সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে ৩০ জনের মতো বিএনপি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে শান্তি শোভাযাত্রা ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। এ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যানও। সমাবেশে অংশ নিতে সকাল থেকেই খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নিতে শুরু করেন। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সড়ক বন্ধ না করার অনুরোধ জানানো হয়। সড়ক বন্ধ করা হবে না বলে নেতারা জানান। কিন্তু সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে সড়কের এক পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টায় বিএনপি অফিসের সামনে ছোট একটি ট্রাকে শান্তি সমাবেশ শুরু হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দলের নেতারা অংশ নেন। মির্জা ফখরুল সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ে পৌঁছুলে বাধে সংঘর্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নয়াপল্টনের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের নেতৃত্বে একটি মিছিল নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় প্রথমে স্কাউট ভবনের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন মিছিলকারীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যানারের সঙ্গে থাকা বাঁশ ছুড়ে মারে। পরে পুলিশ মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিপেটায় অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। এদিকে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে আরেকটি অংশ নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে নিচে ও উপরে আটকা পড়ে। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নেতা-কর্মীরা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। প্রায় ১০ মিনিটের সংঘর্ষে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে কোনো যানবাহন ভাঙচুর হয়নি।
এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এবং নির্বাচনে যাব না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে আগামী দিনে নির্বাচন করবো। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলনের ডাক পড়বে। রাজপথে যে বাধা আসবে তা অতিক্রম করতে হবে। আঘাত করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আটক শতাধিক ও আহত ৬০ নেতা-কর্মী দাবি রিজভীর: এদিকে দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ও গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে। এছাড়া পুলিশের গুলি ও হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন যুবদলের গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, নজরুল ইসলাম, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মনিরা আক্তার রিক্তা, সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক সেলিনা সুলতানা নিশিতা, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শওকত আরা উর্মিসহ ৬০ জনের অধিক নেতা-কর্মী। গুরুতর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে আটকদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ