বিএনপির ভাবনায় শুধু নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির আগামী দিনের ভাবনায় শুধু নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এই ভাবনা নিয়ে বিএনপি এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দুই জোট ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে বসতে চায়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার বার্তা দিয়ে এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই দফায় ছয় দিনব্যাপী রুদ্ধদ্বার সিরিজ বৈঠক শেষ করেছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। আজ দলের স্থায়ী কমিটির সভায় দুই জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে দলীয়ভাবে একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও বসতে চান। ডিসেম্বরে এই দাবিতে মাঠ গরম করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নেতাদের মতামত নিয়ে আমরা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করব। এরপর পরবর্তী করণীয় কী তা নির্ধারণ করব। বিষয়টি গণমাধ্যমকেও জানানো হবে।’ জানা যায়, ছয় দিনব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে প্রায় সবাই আন্দোলনে যাওয়ার মতামত দিয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী দিনের পথ চলায় জামায়াত ছাড়ার পরামর্শও আসে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন, বিশেষ করে ড. কামালের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। আন্দোলনমুখী নেতৃত্বে দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্ব বাছাইয়ের দাবি করেন তৃণমূূল নেতারা। এ দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের চিন্তা মাথায় নিয়ে দলীয় কর্মপন্থা ঠিক করতে ১০-১২ দফার একটি রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মতামত নেয়া হয়। ধারাবাহিক বৈঠকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৫০২ সদস্যের কমিটির ৩৭৬ জন অংশ নেন। এ ছাড়াও অংশ নেন চেয়ারপারসনের ৪৭ জন উপদেষ্টা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১২২ জন নেতা। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পরও বেশকিছু নেতা অংশ নেননি। এ নিয়ে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। দলে শৃঙ্খলা ও ঐক্য ফেরানো না গেলে আন্দোলনে সফলতা আসবে না বলেও নেতারা মতামত দেন। এই অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে না জানিয়ে যারা সিরিজ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন, তাদের সবার কাছেই শোকজের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যেই অনুপস্থিত থাকা নেতাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। গতকাল থেকে শোকজের চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে টানা ৫-৭ ঘণ্টা করে বৈঠক চলে। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত বৃহস্পতিকবার শেষ দিন সাংগঠনিক বিভাগ রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা ও মহানগরের সভাপতিরা অংশ নেন। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর টানা তিন দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামত নেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এরপর দ্বিতীয় দফায় প্রথম দিন ২১ সেপ্টেম্বর সাংগঠনিক বিভাগ ঢাকা ও ফরিদপুর, দ্বিতীয় দিন ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিদের পরামর্শ নেয় বিএনপি।
জানা যায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেবে বিএনপি। এ নিয়ে দলটির নেতারা খুব তাড়াহুড়া করতে চান না। সামনের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিকল্পনা মাফিক এগোনোর চিন্তা দলটির। চলতি মাসে অথবা আগামী মাসের শুরুতে বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি একটি রূপরেখা দিতে চায়। এরপর পেশাজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত নেবেন। সবাইকে একই প্ল্যাটফরমে আনতে তাদের মতামতও নেয়া হবে। তবে, কেউ কেউ সংবাদ সম্মেলন করার আগেই এই মতবিনিময় করার পক্ষে। স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভাঙা গড়ার দিকে না গিয়ে তারা যুগপৎ আন্দোলন করতে চান। গত ছয় দিনের সিরিজ বৈঠকে মাঠ নেতারা এ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে মত দিলেও শেষ পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে নীতিগতভাবে এমনটাই মত দেন। এ ছাড়া ধারাবাহিক বৈঠকে ঘুরে ফিরে বেশিরভাগ নেতাই দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সামনে রেখে আগামীতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ভুল ছিল বলে মতামত দিয়েছেন। বিএনপির মধ্যসারির এক নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার সিরিজ বৈঠকে মতামত দেয়ার বেলায় সবাই আন্দোলনের কথা বলেছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতা যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলেছেন। চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে দলের পুনর্গঠন কাজ শেষ করে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাই করতে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাশাপাশি দেশে আন্দোলনের নেতৃত্বে একজন নেতা ঠিক করতে হবে। এসব মতামত নিয়ে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, সিরিজ বৈঠকের প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় জামায়াত ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ নেতা তাদের মতামত দিয়েছেন। সেখানে সবাইকে বিএনপিকে এককভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। দলের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে বড় করে দেখা হচ্ছে। তারা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দলের নীতিনির্ধারকদের পিছিয়ে থাকার অভিযোগ তোলেন। বৈঠকে ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ও বিগত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে কথা বলেছেন নেতারা। তারা বলেন, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্বাচন করতে হলে এমন একটি ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে যেখানে ভোটের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তা পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিলো। তাই আমরা নির্বাচনকালীন এমন একটি সরকার চাই, যেখানে প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এ নিয়েই মূলত সিরিজ বৈঠকে নেতারা মতামত দিয়েছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করব। এটা ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More