স্টাফ রিপোর্টার: সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তাদের এই অরাজকতা দমনে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। বিএনপি সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি করছে তা উদ্ভট। একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর কোথাও তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি নেই। বিএনপির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোরেল, অর্থনৈতিক সংকট, ব্যাংকের রিজার্ভ, বঙ্গবন্ধু টানেল, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে শিগগিরই। ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম এসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা বলেন। তিনি বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল কতটুকু আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে সেটা আপনারা দেখেছেন। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল হবে। চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়েই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ বা করণীয় জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ পাওয়ার পর চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিআরসিসি)-১৯ ও ডব্লিউআইইটিসি-জেভি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। সরকার দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এখনো পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। আমরা সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে যাচ্ছি। ক্রমেই রপ্তানি আয় বাড়ছে। আমাদের জিডিপি বাড়বে, চলমান অর্থনীতির ধারায় এমন বলিষ্ঠ আভাস আমরা পাচ্ছি। আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় রিজার্ভও বাংলাদেশের আছে। মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক এবিএম ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, সিনিয়র সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণস্পন্দন চট্টগ্রাম। আর এখানেই কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। টানেলটির নির্মাণ কাজ ৯৫.৫০ শতাংশ শেষ। এখন চলছে প্রবেশপথে স্ক্যানার বসানোর কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এপ্রিল-মে’র দিকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম চীনের সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউনে রূপ নেবে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, জাতির পিতা ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে দুটি অংশ ছিল। একটি স্বাধীনতা। অপরটি অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। এই অর্থনৈতিক মুক্তির বড় স্থাপনা হচ্ছে পদ্মা সেতু। যে প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। সেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা আজ স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। মন্ত্রী বলেন, আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি রাজনীতির নামে বিষোদগার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেটা চাই না। আজ একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা-পালটা নিষেধাজ্ঞা। ইউরোপের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকার রিজার্ভ তলানিতে, পাকিস্তানের রিজার্ভও সংকটাপন্ন। আমাদের দেশেও জ্বালানি তেলসহ সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বাংলাদেশের রিজার্ভের অবস্থান এখনো ভালো আছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়শীল দেশের রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলার। দেশে ৫ মাস আমদানি করার মতো রিজার্ভ আছে। দেশের অর্থনীতির চলমান ধারার মধ্যে একটি বলিষ্ঠ আভাস আছে। আগামীতে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি আরও বাড়বে।