প্রচারণা ছাড়া কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ করা যাবে না

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধা হতে পারে এমন সব ধরনের সভা, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই নির্দেশনায় আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি থেকে সবাইকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির অনুলিপি সব মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও এসপিদের দেয়া হয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের নির্দেশনা দেয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৮ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। ইসির এ নির্দেশনা সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি বলে আখ্যায়িত করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার বন্ধ করতে ইসির দেয়া চিঠি অবিশ্বাস্য ঘটনা। এই চিঠি সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশন এ ধরনের চিঠি দিতে পারে না। আইন করেও মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যায় না। আশা করছি, ইসি এ চিঠি প্রত্যাহার করবে। এই চিঠিকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধানপরিপন্থি বলে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি জানিয়েছে, চিঠিতে লাভ হবে না। সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সভা-সমাবেশ বন্ধে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা ছাড়া নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা নিরুৎসাহিত হতে পারে এমন কোনো প্রকারসভা, সমাবেশ বা অন্য সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা গেল। এ চিঠি পাঠানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ও ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের বক্তব্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। কয়েকজন সাংবাদিক রাত ৮টার দিকে ইসি সচিবের বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গেলে তার একান্ত সচিব একেএম সাইফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নিউজ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হলে জনসংযোগ বিভাগের পরিচালকের মাধ্যমে আসতে হবে। সচিব মহোদয় এই নির্দেশনা আমাকে দিয়েছেন। ওই সময়ে যোগাযোগ করা হলে জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ইসির বাইরে থাকার কথা জানান। পরে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা কমিশন বলতে পারবে। আমি বলতে পারবো না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক কোন কর্মসূচিকে অনুমতি দেয়া হবে বা অনুমতি দেয়া হবে না সেই বিষয়ে বলা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। এখন অংশ নেয়া দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮টিতে। ১৫টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনবিরোধী কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত রোববার বিএনপি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ওই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এসব সভা-সমাবেশ হোক নির্বাচন কমিশন তা চায় না। রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে এমন কর্মসূচি পালন বন্ধে চিঠি দিল ইসি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে ইসির চিঠি দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশন নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল বর্জন করে। ওই নির্বাচন বন্ধে টানা কর্মসূচিও পালন করেছিল বিএনপি। ওই সময়ে এ ধরনের চিঠি পাঠানো হয়েছিল কিনা-এমন প্রশ্নে ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ বলেন, ওই সময়ে এ ধরনের কোনো চিঠি দিয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More