স্টাফ রিপোর্টার: করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আর মানতে চাচ্ছেন না রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ। বাঁচার তাগিদে সব ভয় উপেক্ষা করে তারা বাইরে বের হচ্ছেন। যে যেই কাজ পাচ্ছেন করছেন। এদিকে পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ অ্যাপ থেকে পাস প্রিন্ট করে কারণে-অকারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করছে কিছু মানুষ। ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে এমন মানুষের চলাচলও বেড়েছে। রাজধানীর অলিগলি ও আবাসিক এলাকায় সব ধরণের দোকানপাট খোলা রয়েছে।
কর্মজীবীরা বলছেন, লকডাউন ঘোষণা করে আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ করে দিলে আমরা তো না-খেয়ে মরবো। আমাদের কাজকর্ম করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। একই দাবি পরিবহণ ও নৌ-শ্রমিকদের। তারা বলছেন, পরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকার মধ্যে আমরা কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। এ ছাড়া সরকার থেকে আমাদের কোনো ব্যবস্থাও করছে না। এ অবস্থায় আমাদের বেঁচে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ছে। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। সরেজমিন বুধবার দেখা যায়, মিরপুরের মূল সড়কে মানুষের আনাগোনা তুলনামূলক বেশি। গত কয়েকদিন অলিগলিতে মানুষের চলাচল বেশি থাকলেও মূল সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা। এখন জীবিকার তাগিদে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় বের হচ্ছেন। মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়ার মূল সড়কে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী বিভিন্ন আকারের পিকআপের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি চলাচল করছে। মূল সড়কের পাশের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও ফুটপাতের দোকান খুলেছে। শেওড়াপাড়ায় কথা হয় রিকশাচালক সাফায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূল সড়কে মানুষের চলাচল বেড়েছে। লকডাউনের শুরুতে মূল সড়কে মানুষ কম থাকায় যাত্রী কম পাওয়া যেত, এখন যাত্রীর জন্য বসে থাকতে হয় না। ভ্যানে কাপড় বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, বাসায় বাজারের জন্য একটা টাকাও দিয়ে আসতে পারিনি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার টাকাও দিতে পারিনি। খুব খারাপ লাগছে। পরে মেয়ে দুই আন্টির কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফরম ফিলাপ করেছে। এসব আর ভালো লাগে না। কাপড়ের দোকান খোলার অনুমতি নেই। তারপরও ভয়ে ভয়ে বের হইছি। পুলিশ যা বলে বলুক। আমার মতো অনেক মানুষ আছে, যাদের বাইরে না-বের হয়ে বেঁচে থাকার উপায় নেই। লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে পুলিশকে বেশ নমনীয় দেখা গেছে। কাওরানবাজার, বাংলামোটর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, পান্থপথ, সায়েন্সল্যাবসহ শুক্রাবাদ এলাকার সড়কগুলোয় কয়েক দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেশি দেখা গেছে। অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ চেকপোস্টগুলোয় কড়াকড়ি কমেছে।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, লকডাউনের মধ্যেও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে সাধারণ যাত্রী ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির চাপ অব্যাহত রয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ছোট গাড়ির দীর্ঘ সারি। কিন্তু সেখানে কোনো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘসময় পর ঘাটে একটি ফেরি এলে যে যার মতো ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। এতে অ্যাপ্রোচ সড়কে যানজট লেগে যায়। অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি যানবাহনও ফেরিতে উঠতে পারে না। ৩০ মিনিটের নৌপথ পারাপারের জন্য ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা ভাড়া-করা মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মাহেন্দ্র করে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছেন। অন্যদিকে ফেরি পারাপারের জন্য ২৫ টাকার টিকিট ৩০ টাকা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ঠিকমতো ফেরি না-চলায় ট্রলারে নদী পার হতে দেখা গেছে অনেককেই। ট্রলার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ শেখ বলেন, সকাল থেকেই ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির চাপ রয়েছে। রুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ