স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় ধাপে ৫৭টি পৌরসভায় আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ধাপের তফসিল চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করতে পারে কমিশন। রোববার কমিশনের ৭৩তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এ হিসাব অনুযায়ী, চার ধাপে ১৯৬টি পৌরসভা ভোট হতে যাচ্ছে। কমিশন সভা শেষে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ভোটের তারিখ সম্পর্কে বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি দ্বিতীয় ও শেষ দিকে তৃতীয় ধাপ এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ধাপে কমবেশি ৬০টি করে পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে। প্রত্যেক ধাপে ৩০টি পৌরসভায় ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। বাকি পৌরসভাগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট হবে। সচিব জানান, শীতকালে দিন ছোট হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন ধাপে কোন পৌরসভা নির্বাচন হবে- তা কমিশন সিদ্ধান্ত নেন। এখানে কারও তদবির বা প্রভাবের কারণে পৌরসভায় আগে বা পরে ভোট হয় না। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ধাপে ৬০টির মতো পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চলতি সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এবার মোট চারটি ধাপে ১৯৪টি পৌরসভার ভোট হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার ২৯ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সন্ধ্যায় কমিশন সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের তুলে ধরেন ইসি সচিব। এবার চার ধাপে পৌর নির্বাচন করতে চায় কমিশন। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় ইভিএমে ২৮ ডিসেম্বর ভোটের তফসিল দেয়া হয়েছে। তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে আরো ১৬৯টি পৌরসভা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন উপযোগী রয়েছে। রবিবারের কমিশন সভায় সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, আর তিনটি ধাপে ১৬৯ পৌরসভায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট মধ্য জানুয়ারি, তৃতীয়ধাপের ভোট জানুয়ারির শেষের দিকে। আর চতুর্থ ধাপের ভোট হবে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে। এ লক্ষে দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভাগুলোর ভোটের তফসিল চলতি সপ্তাহে দেয়া হতে পারে। সক্ষমতা, প্রাপ্তি, প্রশিক্ষিত লোক ও কারিগরি বিষয় বিবেচনায় সব পৌরসভায় ইভিএমে ভোট করা সম্ভব হবে না বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ধাপে ইভিএমে ভোট হবে ৩০টির মতো পৌরসভায়। বাকিগুলোয় ব্যালটে ভোট হবে। শীতকাল হওয়ায় সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপের তফসিল খুব তাড়াতাড়ি হবে। কর্মপরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন করলেই তফসিল দেওয়া হবে। বাকি পৌরসভাগুলোয় প্রতিটি ধাপে অন্তত ৬০ করে পৌরসভার তফসিল দেয়া হবে বলে জানান সচিব। ধাপে ধাপে বাকি নির্বাচন ইভিএমে হবে বলে ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা জানিয়েছেন। দেশের পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ৩৬ দিন সময় দিয়ে ভোটের তারিখ দেয়া হয় ৩০ ডিসেম্বর। এক দিনে ভোট হয় ২৩৪টি পৌরসভায়। বাকিগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বিবেচনায় ও বিভিন্ন জটিলতা সেরে ভোট হয়। প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রবাসে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে কোনো ফি দিতে হবে না।
পিডিপির নিবন্ধন বাতিল : ইসি সচিব জানান, সভায় প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) নিবন্ধন বাতিল করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত থাকতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় পিডিপি তার বেশিরভাগই পূরণ করতে পারেনি। যে কারণে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসি তদন্ত করে দেখেছে পিডিপি নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করছে না। পরে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে শুনানিও হয়। দলটি কিছু কাগজপত্র দিয়েছিল। কিন্তু ইসি পর্যালোচনা করে দেখেছে, তারা নিবন্ধিত থাকার বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করছে না। কমিশন সভার অন্য সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রবাসে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে কোনো ফি দিতে হবে না।