দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করেছিলো জিয়াউর রহমান
গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
স্টাফ রিপোর্টার: জিয়াউর রহমান দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা পোস্ট।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপিসহ মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাত ধরে যেসব দল তৈরি হয়েছে; সেগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল। দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের মানুষকে শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে। আর যাদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে, ক্ষমতা দখল করে, মার্শাল ল’-এর মধ্যদিয়ে তারা আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়, পরামর্শ দেয়। তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবে। মার্শাল ল’ দিয়ে, সারা রাত কারফিউ দিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তারা দেশবাসীকে কীভাবে গণতন্ত্র দেয়, আর কীসের গণতন্ত্র দেয় আমি বুঝি না। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে পরিচয় দেন, জ্ঞানী-গুণী বলে পরিচয় দেন, তাদের মুখেও শুনি-দেশে নাকি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আমার এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে মিলিটারি ডিক্টেটরদের সময় যারা মার্শাল ল’ দিয়ে রাষ্ট্র চালিয়েছিল, সেটাকেই কি তারা গণতন্ত্র বলতে চান? ওটাই কি তাদের গণতান্ত্রিক ধারা ছিল?
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকা-ের বিচার হবে বলে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। আর সেটা করতে গিয়ে অবৈধ মিলিটারি ডিক্টেটর সেনাবাহিনীর বহু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করে। বিমানবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করে। তাদের গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কারাগারে নিক্ষেপ করে। এই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতায় বসে একটা দলও গঠন করে ফেলে এবং মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে গণতন্ত্রের অভাবটা কোথায়? নাকি যারা এ কথা বলেন তাদের ভালো লাগে যখন জরুরি অবস্থার সরকার হয়, সামরিক শাসক আসে, তাদের একটু কদর বাড়ে, খোশামোদি-তোষামোদি করে। তিনি বলেন, ওই টুকু পাওয়ার লোভে…ব্যক্তি স্বার্থের জন্য তারা দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই ধ্বংস করতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, জনগণের শক্তিটাই বড় শক্তি। তাদের বিশ্বাস ও আস্থাটাই বড় শক্তি।
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ব্যক্তিদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, স্বচ্ছ ব্যালেট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে কে? আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা আসার পরে এবং আমাদের দলীয় প্রস্তাবে এগুলো ছিল। খালেদা জিয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৬ সালে ভোট করতে চেয়েছিল। এটা কেউ ভুলে যাননি। তিনি বলেন, ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট করা মানে হলো ভোট চুরির চেষ্টা করা। আমার কাছে মনে হয় ওটাই তাদের কাছে গণতন্ত্র। জনগণের ভোট চুরি, অর্থ চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এগুলো থাকলেই তাদের কাছে গণতন্ত্র। না হলে গণতন্ত্র খুঁজতে যাবে কেন তারা।
নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, কেউ তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে তারা মেনে নেয় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছে, মানুষ মেনে নেয়নি। এরপর ২০০১-এ সরকার গঠন করে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছে জনগণ মেনে নেয়নি। সে নির্বাচন বাতিল হয়েছে। বিএনপি, খালেদা জিয়াকে দুই দুই বার ভোট চুরির অপরাধে সরে যেতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন থেকে এ দেশে সরকার গঠন করেছে। তখন থেকেই এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের অধিকার রক্ষা করা, ভাতের অধিকার রক্ষা করা, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় ছিল তখনই মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
বিএনপি কোন মুখে ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে তা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফলাফল কী? বিএনপি পেয়েছিল ৩০টা সিট (আসন)। এটা সবার মনে রাখা উচিত। ওই নির্বাচন নিয়েতো কেউ প্রশ্ন করতে পারে না। আর আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পায়। তাহলে পরবর্তী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোন মুখে প্রশ্ন তোলে? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নকাজের মাধ্যমে জনসমর্থন বাড়িয়েছে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে। আজকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নতি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না যারা এখনো গণতন্ত্রের খোঁজ করেন, মনে হয় যেন দূরবীন দিয়ে ওনারা গণতন্ত্র দেখতেছেন। তাদের আমি জিজ্ঞেসা করব জাতির পিতার সাড়ে তিন বছর ও আওয়ামী লীগের আমল ছাড়া কবে গণতন্ত্র ছিল? ক্ষমতাতো ছিল সেনানিবাসে বন্দী। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবইতো সেনানিবাসে বন্দী। সেনানিবাস থেকে চালানো হতো দেশ। তাহলে গণতন্ত্র বা জনগণের শক্তিটা কোথায়? জনগণের শক্তি ছিল না। খালেদা জিয়া বা জিয়া বা এরশাদের হাতে। জনগণতো সেখানে অবাঞ্ছিত, শক্তি ছিল না। যারা এ ১৪ বছর নিয়ে কথা বলেন তাদের বলবো-এর আগের বাংলাদেশটা দেখেন, আর এখন বাংলাদেশটা দেখেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছি। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুরে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নতি করেছে। যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতি, দুর্বত্তায়নের ছিল। আজকে সে দেশ গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। আওয়ামী লীগ একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে বলেই সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি।
সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির জাতীয় কমিটির প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।