দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না : অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে

দক্ষিণ আফ্রিকায় নাগরিক সংবর্ধনায় প্রবাসীদের ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। নিশ্চিত করুন যে, দেশের উন্নয়নের যাত্রা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই অব্যাহত থাকবে। ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার প্রবাসীদের আয়োজনে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পেয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। অথচ বিএনপি লুটপাট, দুর্নীতি ও হত্যা করেছে। আর আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি, তাদের দুঃসময়ে পাশে থাকি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছি। উল্টো বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করছে, টাকা কামাচ্ছে। দুর্নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, অর্থ পাচার, লুটপাট ও সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কিছু টাকা ফেরত এনেছে, যা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে ‘চুরি করে’ বিদেশে পাচার করেছিল এবং অবশিষ্ট টাকাও জব্দ করা হয়েছে। আমি জানি না, কোথা থেকে তারা অর্থ পাচ্ছে, যা ব্যবহার করে আবার পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। এবার বাড়াবাড়ি করলে দেশের মানুষ তাদের রেহাই দেবে না। এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেকের স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। দন্ডপ্রাপ্তরা বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং তাদের সামনে রেখে রাজনীতি করছেন। জনগণ তাদের ভোট দেবে না। জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট দেবে না। জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে পরে বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে সহিসংতার প্রসঙ্গ ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ৫শ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তারা অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ নিয়ে দেশে ফিরে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশেও যেতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তানসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে চার দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা হলেন-ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর সাইমা সুলস্নুহু, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে পৃথক পৃথক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক জোহানেসবার্গে স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থে দ্বি-পাক্ষিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে দেশগুলো থেকে ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার আমন্ত্রণে ২২ আগস্ট ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে পৌঁছান। এর আগে, ব্রিকস প্লাস সংলাপের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, উগান্ডার ভাইস-প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে এক ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করেন। চার দিনের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আজ ২৬ আগস্ট জোহানেসবার্গ ত্যাগ করবেন এবং আগামীকাল ২৭ আগস্ট সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More