ডেঙ্গু চিকিৎসায় স্যালাইন সংকট : দায় নিচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

প্রতিদিনই ভাঙছে রেকর্ড : প্রাণ গেলো আরও ১০ জনের হাসপাতালে ভর্তি ২৭৬৪

স্টাফ রিপোর্টার: যেন রেকর্ড ভাঙার খেলায় মেতেছে ডেঙ্গু ভাইরাস। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ৭৬৪ জন রোগী সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একদিনে হাসপাতালে ভর্তির সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি। এর আগে ৩০ জুলাই ভর্তি হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৩১ জন। এতোদিন সেটাই একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিলো। নতুন রোগীদের নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩২ জনে। এরমধ্যে আগস্টের প্রথম ৬ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৯০০ জন। এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ ৪২ হাজার ৪৬০ জন এবং নারী ২৪ হাজার ২৭২ জন। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডেঙ্গু আক্রান্তে সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিপ্তর। এ নিয়ে চলতি বছর ক্ষুদ্র মশাবাহী ডেঙ্গুতে ৩১৩ জনের মৃত্যু হলো। আগস্টের প্রথম ছয় দিনেই মারা গেছেন ৬২ জন। মোট মৃতদের মধ্যে নারী ১৭৬জন এবং পুরুষ ১৩৭ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীতে ২৪৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৫ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরেই বেশি। ঢাকায় ১ হাজার ৬৮৬ জন। আর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। রোববার সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৩৪৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৬০৫ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ৭৪২ জন।

এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল বর্ষা মরসুমের আগেই। ভরা বর্ষায় জুলাই মাসে তা ভয়ংকর রূপ নেয়। স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায় জুলাইয়ে ৩১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন রোগী, মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের। এক মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই সংখ্যা এ বছরের মোট সংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ। এছাড়া জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং মে মাসে ২ জন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রমণ বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, মারা যান ২৮১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।

স্যালাইন সংকটের দায় নিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ: ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে তরল স্যালাইন। অনেক হাসপাতালে এ স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কী ভূমিকা রাখছে-উত্তরে অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, স্যালাইনের ব্যাপারটি শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর নির্ভরশীল নয়। এ বিষয়ে ওষুধ কোম্পানি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোরও বড় ভূমিকা আছে। রোববার দেশের চলমান ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, স্যালাইনের ব্যাপারটি শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর নির্ভর করে না। এক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ বেসরকারি সেক্টর রয়েছে। সেখানে বড় একটা কো-অর্ডিনেশন প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা তথ্য নিয়ে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সংকট মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কেন সংকট ও কোথায় দাম বেশি রাখা হচ্ছে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদারকি করছে।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব একটা সময় সর্বোচ্চ পরিমাণ হয়ে এর পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর একইভাবে মিল থাককে নাও পারে। গত বছরে অক্টোবরে এসে ডেঙ্গু কমতে শুরু করে। এবার সেটা আগস্টেও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, জুলাইজুড়ে ডেঙ্গু প্রতিনিয়ত বেড়েছে। এ বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আগে যে হারে বেড়েছিল এখন সেভাবে বাড়ছে না। রোগীর সংখ্যা এতদিন বেড়েছে এবং সে জায়গায় স্থিতিশীল রয়েছে। যখন এ স্থিতিশীলতা থেকে রোগী কমার দিকে যাবে তখন হাসপাতালগুলোতে চাপ কমবে। তবে তার আগ পর্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় আমাদের থাকতে হবে।

এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশন নতুন একটি ওষুধ নিয়ে এসেছে, কতটুকু সেটি কার্যকর হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিধন নিয়ে আমার পুরোপুরি জানা নেই। তবে সিটি করপোরেশন যে ওষুধগুলো এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এর পরেই সেটি প্রয়োগ করা হয়েছে। যেহেতু তারা নতুন একটি ওষুধ নিয়ে এসেছে, অবশ্যই এর কার্যকারিতাও পরীক্ষা করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More