ডেঙ্গুতে চিকিৎসকসহ আরও ৮ মৃত্যু : হাসপাতালে ২২০১

 

স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। ক্ষুদ্র এডিস মশাবাহিত এ রোগটি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও আগস্টে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার রোগী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দৈনিক গড়ে ১১ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ হাজার ২০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক তরুণ চিকিৎসকসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, নিহত চিকিৎসকের নাম বায়েজিদ আহমেদ (২৬)। তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৬ চিকিৎসকের মৃত্যু হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ডা. বায়েজিদ সফলভাবে ব্যাচেলরস অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) সম্পন্ন করে এই হাসপাতালে যোগদান করেন। তিনি ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডেঙ্গু শনাক্তের পর প্রায় দুই সপ্তাহ বেসরকারি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়ায় দুই দিন আগে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ডা. বায়েজিদ আগে থেকেই প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ডেঙ্গুজ্বর শনাক্তের পর শরীরে ইন্টারন্যাল ব্লিডিং হচ্ছিল। আমাদের চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া অপর চিকিৎসকরা হলেন ডা. শরীফা বিনতে আজিজ, ডা. আলমিনা দেওয়ান মিশু, ডা. এম আরিফুর রহমান, ডা. সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা ও ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা রওনক।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ৯২৬ জন ঢাকায় এবং ১ হাজার ২৭৫ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। সবমিলে দেশে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জনে। এছাড়া গত একদিনে ৮ জনসহ এ বছর ডেঙ্গুতে ৫১৪ জনের মৃত্যু হলো। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৯৪২ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৬৩ জন ঢাকার এবং ৪ হাজার ১৭৯ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। সরকারের দেয়া ডেঙ্গু সংক্রমণবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে যেখানে ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। এর আগে জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মেতে ১ হাজার ৩৬ এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুনে সারা দেশে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জুলাইয়ে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়। আর আগস্টের ২৪ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৬৩ জনের। এর আগে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ২, মেতে ২ এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী এবং মৃত্যুর এই সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, একে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More