কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সারা দেশে কৃষিবীমা এখনই প্রয়োজন

রহমান মুকুল: পেয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি ৪০/৫০ হাজার লোকসানের দাবি করে কুষ্টিয়ার কৃষকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। বাজারে ফুলকপি ৫ টাকা পিস বিক্রি হলেও মাঠের কৃষককে প্রায় ফ্রি দিতে হচ্ছে। বেগুন ১০-২০ টাকা, মুলা ২ টাকা, ওলকপি ৩ টাকা, শিম ৭/৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দৃশ্য পূর্বাপর। লাভ তো দূর অস্ত, উৎপাদন ব্যয় ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’র মতো তার ওপর আছে প্রতাপশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আছে জলবায়ু পরিবর্তনের মর্মান্তিক অভিঘাত। ভূপ্রকৃতিগত কারণে বাংলাদেশ যেমন সম্ভাবনাময়, তেমনি সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণও। কৃষিতে অতি ক্ষরা ও অতি বৃষ্টির নেতিবাচক প্রভাবের সাথে আমরা খুব পরিচিত। পরিচয় আছে বন্যার সাথে। আছে পাহাড়ি ঢলে কিংবা প্রতিবেশি দেশের অবাঞ্চিত জলস্রোতে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি। তাহলে কি কৃষকরা সবজি চাষ করে অপরাধ করেছেন? নাকি কৃষিই অভিশাপ হয়ে উঠেছে? এভাবে চলতে থাকলে এদেশে কৃষির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়ই বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষকদের জানমাল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে কৃষকরা বিশেষ করে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। পরের বছর কৃষকরা স্বাভাবিক উৎপাদন বজায় রাখতে পারেন না। ফলে এনজিও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় শস্য বীমা থাকা আবশ্যক। কৃষিবীমা বা শস্যবীমার কনসেপ্ট একেবারে আনকোরা নয়। উন্নত বিশ্বের কৃষি ব্যবস্থাপনায় এটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশেও। আমাদের দেশের মতই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ একটি কৃষি প্রধান রাজ্য। রাজ্যের কৃষকদের প্রায় প্রতি বছর অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে ২০১৯ সালে বাংলা শস্যবীমা যোজনা চালু করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে শস্যবীমা যোজনা চালু করা হয়। আমাদের দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হাওর এলাকার সাত জেলায় শস্যবীমা চালু কথা। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে সাধারণ কৃষকদের রক্ষায় এ উদ্যোগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কৃষকদের থেকে প্রিমিয়াম হিসেবে নামমাত্র টাকা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম চালু হবে। প্রিমিয়ামের বাকি অর্থ দেবে সরকার। পাশাপাশি বিদেশি দাতা সংস্থাকেও এ প্রকল্পে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছিল। এজন্য সাধারণ বীমা করপোরেশন একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘সরকার হাওরের জন্য শস্য বীমা শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে হাওরের কৃষকদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি উপকৃত হবে। হাওরে বন্যার পরে সরকার কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। এতে সরকারের অনেক ব্যয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার কারণে কৃষক প্রকৃতপক্ষে লাভবান হন না। তবে সরকারের ত্রাণ বাবদ ব্যয় যদি বীমার প্রিমিয়ামে প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়, তাহলে কৃষকরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহায়তা পাবে।’ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ জানান, ‘বোরো ধান আবাদের জন্য হাওড়াঞ্চল খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওইখানে শস্যবীমা সফল হলে সারা দেশে বাস্তবায়ন সহজ হবে। দেশে শস্যবীমা প্রচলন প্রয়োজন।’ আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভিন জানান, ‘শস্যবীমা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য সহায়ক হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলার আবহাওয়া বিরূপ হয়ে উঠেছে। এখানে শস্যবীমা চালুর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাবো।’ নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সম্ভাবনা নিয়ে কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এখনও আমাদের অর্থনীতি মূলত লাঙ্গলের ফলার অর্থনীতি। কৃষি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা আমাদের অর্থনীতির ভিত্তিও। কৃষির কল্যাণ আসলে দেশের কল্যাণ। মাঠে-নদী-জলাশয়ে আমাদের কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ, তারাই আমাদের প্রকৃত উৎপাদক। কৃষিতে বীমার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। চুয়াডাঙ্গা জেলার জলবায়ু ইতোমধ্যে চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এটাও কৃষিতে প্রাকৃতিক অভিঘাত। হাওড়াঞ্চলের মত চুয়াডাঙ্গায় কৃষিবীমা বা শস্যবীমা চালু করা এখন সময়ের দাবি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More