কুষ্টিয়ায় ১২০ টাকার বিনিময়ে পুলিশের চাকরি পেলেন ৭৪ জন নারী-পুরুষ

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানী টেলিটকের মাধ্যমে মাত্র ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশের চাকরি পেয়েছেন ৭৪ জন নারী পুরুষ। পুলিশের চাকরি মানেই ঘুষ। প্রচলিত এই ধ্যান-ধারণাকে ভেঙে দিয়ে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম। সদ্য পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া ৭৪ জন এবং তাদের অভিভাবকদের সামনে হাজির করে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, আমি এবং আমার টিম যারা চাকরি পেয়েছে তাদের কাছ থেকে যদি একটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছি এমন প্রমাণ যদি কেউ দেখাতে পারেন তাহলে আপনারা যে শাস্তি দেবেন তা মাথা পেতে নেবো। ঘুষ ছাড়া বিনামূল্যে কনস্টেবল পদে সরকারি চাকরি পেয়ে তাই আবেগে আপ্লুত চাকরি গ্রহিতা এবং তাদের অভিভাবকরা। এ সময় অনেকের চোখে-মুখে আনন্দাশ্রু দেখা গেছে। দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাংদিয়া গ্রামের আরেজুল ইসলামের সম্বল বলতে পৈত্রিক ভিটার ৫ কাঁঠা জমি। তার আবার ভাগিদার ২ ভাই ও ৪ বোন। নিজের কোন জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষাবাদ করে আবার অনেক সময় দিনমজুরি করে সংসার চালান। অভাব-অনাটনের মধ্যেই দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় ছেলে আশিকুর রহমান রাজিব অনার্সে পড়ছেন। ছোট ছেলে রকিবুল হাসান বিজয় পড়ে ৭ম শ্রেণিতে। দিনমজুর আরেজুল ইসলাম জানান, বড় ছেলে তার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশের চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়ায়। ছেলের চাকরি পেতে কোথাও কোন টাকা-পয়সা ঘুষ দিতে হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করায় যেখানে কঠিন সেখানে ঘুষ দেব কোথা থেকে। চাকরি পাওয়া মো. হামিন (১৯)। গত বছর কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। তার পিতা বাবর আলী ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোলদাগ মোসলেমপুর গ্রামের জিকে কোয়ার্টারে বসবাস করেন। পেশায় দিনমজুর বাবর আলী জানান, নিজের কোন জায়গা-জমি নাই। একবেলা খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তাদের। ছেলে হামিন প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। ছেলের চাকরি হওয়ার সংবাদ শুনে তার খুশির কোন সীমা নেই। হামিদুল হক। পেশায় একজন অটো চালক। কোন ছেলে সন্তান নেই। দুই মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়েই তার সংসার। বড় মেয়ে হাফিজা খাতুন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। হাফিজা জানান, পয়সা দিয়ে চাকরি নেয়ার সামর্থ আমার পিতার নেই। শুনেছিলাম পুলিশের চাকরি টাকা ছাড়া হয়না। কিন্তু নিজে চাকরি পেয়ে আমার সেই ধারণা এখন ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিলো দেশের জন্য করে যেতে চাই। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পুলিশের চাকরি করে জনগণ এবং দেশের সেবা করে যেতে চাই। শুধু হাফিজা, হামিন বা আশিকুর রহমানই নয় কুষ্টিয়ায় এবার যারা পুলিশের চাকরি পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম জানান, যখন এদের লাইনে দাঁড় করানো হয় তখন মাইকে একটি ঘোষণা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা কাউকে একটি টাকা ঘুষ দেবে না। যদি তোমাদের কাছে কেউ ঘুষ দাবি করে তাহলে আমাকে কিংবা থানায় ফোন করে জানাবে। আমার ওপর আস্থা রাখতে পারো। যদি তোমার যোগ্যতা থাকে তাহলে এমনিতেই চাকরি হবে। তাই কাউকে চাকরির জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হবে না। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় চাকরি নয়, সেবা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চাকরির জন্য ২৫০২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ৩৪১ জন পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। একজন প্রার্থী বাদে সবাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ ১২৩ জনকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ডাকা হয়। মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৭৪ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। এদের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ এবং নারী ৫ জন। সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কামরুল হাসান, নিয়োগ বোর্ডেও সদস্য যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ফিরোজ কবিরসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে নিয়োগ প্রাপ্তদের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং অভিভাবকসহ সকলকে মিষ্টি মুখ করান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More