পূর্বনির্ধারিত সময় শেষ হলেও সার্চ কমিটিতে নাম দেয়নি বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৫টি দল
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিজেদের পছন্দের নাম প্রস্তাব করেছে নিবন্ধিত ২৪টি রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়াও ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্সপার্টি, জাসদ, ন্যাপ, তরিকত ফেডারেশন, জেপি, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশসহ ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পৃথকভাবে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম দিয়েছে। ছয়টি পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও নাম জমা দেয়া হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়েও সিইসি ও কমিশনার হওয়ার জন্য মেইলের মাধ্যমে নাম পাঠিয়েছেন ইসি গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির কাছে। রাজনীতিকদের পছন্দের কাজ শেষ করেছেন। সার্চ কমিটির সদস্যদের আয়নায় খুঁজে বের করা হবে ভাগ্যবান ১০ জনকে। নির্বাচন কমিশনার হতে রাজনৈতিক দলের পছন্দ, ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রাপ্ত নাম এবং পেশাজীবী সংগঠনের নামগুলোর মধ্য থেকে কাদের নাম যাচ্ছে বঙ্গভবনে সেদিকে দৃষ্টি সবার। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে কোনো নাম জমা দেয়নি। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৩৯টি। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল সার্চ কমিটি।
সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম বিকেল ৫টার পর সাংবাদিকদের বলেন, ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন। এ ছাড়া ছয়টি পেশাজীবী সংগঠন থেকে প্রস্তাব এসেছে। এই পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে বিএমএ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনও আছে। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক বড় সংখ্যায় প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এগুলো মূলত ই-মেইলে এসেছে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম। তবে মোট কতোজনের প্রস্তাব এসেছে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে শফিউল আজিম বলেন, নামগুলোর তালিকা করে। এখন অনুসন্ধান কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে। নামগুলো নিয়ে আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। এজন্য ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটির হাতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় থাকলেও আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কমিশন গঠনের সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হবে বলে সার্চ কমিটির একাধিক ও বঙ্গভবন সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিবন্ধিত সবাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে দলের পছন্দের ব্যক্তিদের নামের তালিকা সার্চ কমিটিতে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দলগুলোর পক্ষ থেকে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তালিকা পাঠানো হয়। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নামের তালিকা পৌঁছুনো হয়। দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান তালিকা পৌঁছে দেন। এ বিষয়ে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, আমরা কেবল বার্তাবাহক হিসেবে দলের পক্ষে সিলগালা করা একটা কাগজ জমা দিয়েছি।
তবে বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ ১০ জনের নামের তালিকা দিয়েছে। তাদের দেওয়া নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন দুজন বিচারপতি, একজন জেলা দায়রা জজ, একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, একজন কবি-সাহিত্যিক, একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ১০ জনের নামের তালিকা সার্চ কমিটির কাছে পাঠিয়েছি। যাদের যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সেসব ব্যক্তিকে তালিকায় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।’ ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) বৃহস্পতিবার ১০ জনের নামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পৌঁছে দিয়েছে বলে দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জীবনবৃত্তান্তসহ নামের তালিকা গতকাল পৌঁছে দেয়া হয়। এ ছাড়া ই-মেইলেও ওইসব নাম ও জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শরিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, তারা ইসি হিসেবে নিয়োগের জন্য একজনের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, সময় কম পাওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা যায়নি। তাছাড়া দু-একজনের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু সম্ভাবনা নেই বলে তারা নাম দিতে রাজি হননি।
তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, তারা যোগ্যদের দেখে ১০ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। তাদের তালিকায় সাবেক আমলা, বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন সেক্টরের সফল ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গতবারও আমাদের তালিকা থেকে একাধিক ব্যক্তি ইসিতে স্থান পেয়েছিলেন। আশা করি এবারও থাকবে।’ জাতীয় পার্টির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম জানান, তারা গতকাল ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছেন। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া জানান, তারা ছয়জনের নাম পাঠিয়েছেন। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, তারা সাতজনের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া জাকের পার্টি সাতজনের নাম পাঠিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামিম হায়দার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে গত একাদশ জাতীয় সংসদে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিকল্প ধারা বাংলাদেশ পাঁচজনের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এমপির পক্ষে দলটির যুগ্ম মহাসচিব এনায়েত কবীর স্বাক্ষরিত চিঠিটি সচিবালয়ে সার্চ কমিটির কাছে গতকাল দুপুরে পৌঁছে দেন বিকল্পধারার যুগ্ম দফতর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলু। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হিসেবে বিকল্পধারা যাদের নাম প্রস্তাব করেছে তারা হলেন- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা (সিইসি), স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, (কমিশনার), সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান (কমিশনার), ফেমার সাবেক সভাপতি মনিরা খান (কমিশনার) ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর (কমিশনার)।
গণফ্রন্ট চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, আমরা ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছি। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক কেবিনেট সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌফিক হোসেন, সাবেক সচিব এম এ কাদের সরকার, সাবেক সচিব এ এম এন নাসির উদ্দিন, সাবেক সচিব কায়কোবাদ হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব এমএএন সিদ্দিক, সাবেক সচিব ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী, সাবেক সচিব আমিনুল ইসলাম ভূইয়া, মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, গণফ্রন্ট মনে করে তাদের মধ্যে থেকে ইসি কমিশন গঠন হলে তারা ভালো করবেন।
সার্চ কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে মেইলে পাওয়া নামগুলো নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত শেষে সার্চ কমিটির সদস্যরা যোগ্য ১০ জনকে বাছাই করে সে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। একটি সূত্র জানায়, বিচার পেশা থেকে এবার প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) হতে পারেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে সবচেয়ে জোর আলোচনায় রয়েছেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন তুলি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন হতে যাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার হিসেবে কারা আসছেন? কারা হচ্ছেন নূরুল হুদা কমিশনের উত্তরসূরি তা জানতে সবার চোখ সার্চ কমিটির দিকে। বঙ্গভবনে কাদের নাম পাঠানো হচ্ছে সে দৃষ্টি এখন রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সুশীল সমাজসহ দেশবাসীর। ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই বিষয়টি জাতির সামনে খোলাসা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ