স্টাফ রিপোর্টার: দলীয় পদে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকে মনোনয়ন পেয়ে শুধু ক্ষুব্ধই নন, তাদের অনেকে আপিল করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গারও বেশ ক’জন রয়েছেন। নাটোর হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা দলের নিয়ম মেনে আবেদন করলেও কেন্দ্রে নামটাও পাঠানো হয়। এ কারণে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পুনর্বিচেনার জন্য আপিল করে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
দলের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন দলের পদধারী অনেক নেতা। বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া, ভালো পদ না পাওয়ার হুঁশিয়ারিতেও কাজ হচ্ছে না। দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ১১ শতাধিক। এরমধ্যে অনেকে দল মনোনীতদের চেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে প্রতীক বরাদ্দ পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপিল করেছেন। সবমিলিয়ে বিদ্রোহী নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এদিকে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের চুড়ান্ত করেছে। গত ২১ অক্টোবর থেকে সোমবার পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। মনোনয়ন বোর্ডে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপিল করার সুযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিছু কিছু স্থানে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তৃণমূল একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে স্থানীয় সরকার পরিষদের মনোনয়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা তারপর জেলা হয়ে কেন্দ্রে নামের সুপারিশ আসে। ওবায়দুল কাদের জানান, এর আগে নাম তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোনোরূপ স্বজনপ্রীতি ও লোভের বশবর্তী না হয়ে এবং প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য গোপন না করে নাম প্রেরণের জন্য দলীয়ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে দলের নেতারা জানিয়েছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ, বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলীয় পদ-পদবি এবং মনোনয়ন না পাওয়া, দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে কোনো নোটিশ ছাড়াই দল থেকে বহিষ্কার, তৃণমূল থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে কেন্দ্রে নাম পাঠানো এতো সব উদ্যোগ নিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে সবার মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা, কেন্দ্রে নাম পাঠানোর সময় স্বজন পোষণ, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং, বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনের মাঠে না থাকা এবং দলের চেইন অব কমান্ডের অভাবের কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এগুলোই বিদ্রোহী প্রার্থী না ঠেকাতে পারার অন্যতম কারণ। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৬ সালে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দলীয় নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে। তারপরেও, বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। একাধিক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, উপজেলা, জেলা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কোন্দলের কারণে তৃণমূলে যোগ্য প্রার্থীর নাম আসছে না কেন্দ্রে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজেদের লোকজনের নামই রেজ্যুলেশনে পাঠিয়েছেন।
অপরদিকে জানিয়েছেন, দলের তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি কিছু সংস্থার প্রতিবেদনকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেখা গেল তৃণমূল থেকে যার নাম পাঠানো হয়েছে সংস্থার রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সেসব দিক বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিতর্কিত কাউকে দলীয় প্রতীক না দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করা হয়েছে। তারা বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশনা রয়েছে-ত্যাগী, পরীক্ষিত ও জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দিতে। আমরা সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছি। তারপরও যেসব মনোনয়নে বড় ধরনের ভুল মনে হয়েছে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। তথ্য-প্রমাণ পেলে সামনে আরও পরিবর্তন আসবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ