সার্চ কমিটির মাধ্যমেই ইসি নিয়োগ
স্টাফ রিপোর্টার: সার্চ কমিটির মাধ্যমেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এমন বিধান রেখে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইসি নিয়োগে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের মধ্যেই আইনটির খসড়া অনুমোদন করলো সরকার। প্রেসিডেন্টের সংলাপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইসি নিয়োগে সংবিধান মোতাবেক আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতকাল প্রেসিডেন্টের সংলাপে অংশ নিয়ে ইসি নিয়োগ আইন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশও দীর্ঘদিন থেকে একই দাবি জানিয়ে এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসি নিয়োগ আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা, অযোগ্যতা এবং সার্চ কমিটিতে কারা থাকবেন সে বিষয়টি বলা আছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সংবিধানের ১১৮(১)-এ বিধান আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। এটি বেশি বড় আইন নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ জাতীয় আইন যেহেতু আমরা হ্যান্ডেল করে আসছি, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন আছে; মোটামুটি সেই অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। অন্যান্য আইনে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই অনুসন্ধান কমিটি হবে। অনুসন্ধান কমিটি যোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন, আর কারা হতে পারবেন না, তা খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রথমত তাদের বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি বা বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলে কেউ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- আদালতের মাধ্যমে যদি কেউ অপ্রকৃতিস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হলে, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্খলন এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দু-বছর কারাদ-ে দ-িত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ে দ-িত হলে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন না। সার্চ কমিটিতে কারা থাকছেন জানতে চাইলে- খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ছয় সদস্যের এই সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহা হিসাবনিরীক্ষক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্টের মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেবেন। আগামী নির্বাচন কমিশন কী এ আইনের অধীনে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি এর মধ্যে হয়ে যায়, তাহলে হবে। আজ (গতকাল সোমবার) অনুমোদন দেয়া হলো, হয়তো কাল-পরশু দু’দিন লাগবে আইন মন্ত্রণালয়ের। তারপর যদি ওনারা সংসদে পাঠান, সংসদেও তো কয়েক দিন লাগবে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে, ওনারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। যদি হয় তো হয়ে যাবে, অসুবিধা তো নেই। আইন ভাঙলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ বা পদত্যাগ কীভাবে হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, আমার তো যতদূর মনে পড়ে, যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা অপসারণ হন, একই পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। বাকিগুলো হয়তো বিধিতে উল্লেখ করে দেয়া হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ