স্টাফ রিপোর্টার: বাঙালিদের গৌরব ও মর্যাদার পদ্মা সেতু নির্মাণ দেশ-বিদেশে আলোচনা শুরু হয়েছে আরও আগেই। গর্বের এ সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশকে। সেসব অভিনন্দন বার্তায় পদ্মা সেতুর কারণে দেশের জনগণের জীবনমান পরিবর্তনের বিষয়টি যেমন এসেছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপনও করা হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করবে, বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে এবং জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করবে। মানুষ ও পণ্যকে দক্ষতার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য টেকসই পরিবহণ অবকাঠামো নির্মাণ অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুক্রবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রসারে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের নিজের অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুটি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে ঢাকা ও অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এছাড়া সেতুটি দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে, সরবরাহ ব্যবস্থাতেও আসবে উন্নতি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এই সেতু অন্য রকম এক আবেগের নাম। কারণ লঞ্চ বা ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে দশকের পর দশক ধরে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে পাকিস্তান বলেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় এই সেতুটির উদ্বোধন একটি দৃষ্টান্ত। শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ লিখেছেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্তিতে আমি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এবং দেশটির জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় এই সেতুটির উদ্বোধন একটি দৃষ্টান্ত। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ও স্থায়ী উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেটা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ। অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, আমি সরকারপ্রধানের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আমার ব্যক্তিগত অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
এদিকে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের সাহসের প্রশংসা করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, সেতুটি আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক। স্বল্পোন্নত দেশ বাংলাদেশ এমন সেতু নির্মাণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিলো। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আজ সেতুটি শুধু বাস্তবায়নই হয়নি, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এর শতভাগ নির্মিত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, যদি সাহসের কোনো সীমা না থাকে, তবে আকাশ তার সীমা। বৃহস্পতিবার রাতে এক অনুষ্ঠানে লি জিমিং বলেন, পদ্মা সেতু একটি সংকল্পের প্রতীক। সেতুটি নির্মাণে সময় লেগেছে আট বছর। শক্তিশালী পদ্মার স্রােতধারার ওপর এর অবয়ব একটি গল্প বলছে যে, কিভাবে মানব প্রকৌশল প্রকৃতির শক্তিকে জয় করেছে। নদী হয়তো হাজার বছর ধরে বহমান, কিন্তু এর চেয়ে বেশি টেকসই হলো সেই মানুষের অধ্যবসায়, যারা একদম শূন্য থেকে সেতুটি তৈরি করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, আর এক দশকের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এ পর্যায়ে আমি এ অসামান্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই।
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে তৈরি পদ্মা সেতুর ক্ষুদ্রাকৃতির অবয়ব সামনে নিয়ে তিনি বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী কোম্পানি চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ বা এমবিইসি এটিকে আমার কাছে একটি স্মারক হিসেবে পাঠিয়েছে।
পদ্মা সেতুকে সমৃদ্ধির প্রতীক উল্লেখ করে লি জিমিং বলেন, বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, সেতুটি বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে এবং বাংলাদেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে উপকৃত করতে পারে। এটি কেবল এ দেশ ও অঞ্চলকে সংযুক্ত করবে না, বরং অভিন্ন সমৃদ্ধি এবং একটি সমন্বিত ভবিষ্যতের পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে আমাদের দুদেশের মানুষকে হৃদয় দিয়ে সংযুক্ত করবে।