চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়া গ্রামে আগুনে পুড়ে যাওয়া কলেজ ছাত্রীর পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক
নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়া গ্রামের আগুনে পুড়ে যাওয়া মেধাবী কলেজ ছাত্রী পলির পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ালেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা পলি জীবনের বাকিটা সময় যেনো পরিবার বা সমাজের বোঝা না হয় সে জন্য তার সহপাঠিরা তার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এরই মধ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পলি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে বীজ মনের মনিকোঠায় বপন করেছিলো তা যেনো নষ্ট না হয়ে যায় সবসময় তার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তার স্কুল ও কলেজ জীবনের সহপাঠীরা।
জীবনের কাঁটা থেমে নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। যারা সময়র সাথে জীবনকে রাঙাতে পারে তারাই একসময় সাফল্যের শীর্ষে পা রাখে। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম মানুষ আর মননভেদে নানা রকম। একেক জনের গল্প একেক রকম হলেও উদ্দেশ্য থাকে সামনে এগিয়ে চলা। কেউ বা ধীরে আবার কেউ বা দ্রুত-সবাই সামনে এগোনোর প্রাণপন প্রচেষ্টায় করে যায়। কোনো কিছুই জীবনে চিরস্থায়ী নয়। আবেগ, অনুযোগ কিংবা অভিযোগ- কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়। সামাজিক স¤পর্কগুলো সবসময়ই এক রকমের গাঢ় হবে না। আজ আপনার কাছে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে। আজ যিনি প্রশংসা করছেন, কাল তিনি আপনার কঠোর সমালোচনা করতেই পারে। সমালোচনা যাই হোক না কেন মহৎ উদ্দেশ্যে কাজ করাটাই মনুস্বত্ত। চলার পথে কখনো কখনো জীবনে ঘটে যায় দূর্ঘটনা। বেঁকে যায় চলার পথ। এসব প্রতিকুলতার মাঝে কেউ হতাশাগ্রস্থ হয়ে জীবনকে মূলহীন করে ফেলে আবার কেউ বাস্তবতার সাথে সংগ্রাম করে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার চেষ্টা করে।
তেমনই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়সলুয়া মুচিপাড়ার রাজমিস্ত্রী আরজান আলী ওরফে প্রীতিমের মেয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। অভাব অনটনের সংসারে পিতা যখন তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে অপারগতা প্রকাশ করে তখন পলি হস্থশিল্পের কাজ করে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নেবার পন করে। শুরু করে সংগ্রামী জীবন। লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য শুরু করে নাইলন সূতদিয়ে গা ডলার ছোবড়া তৈরীর কাজ। হঠাৎ ১৯ নভেম্বর রাতে ছোবড়া তৈরী শেষে সুতার মুখ আগুন দিয়ে পোড়াতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। অসাবধানতা বসত পরনে থাকা কামিজের নিচে লেগে যায় আগুন। পুড়ে যায় শরীরের ৫৫ শতাংশ অংশ। অর্থভাবে চিকিৎসা নিতে না পারা পলির পাশে দাঁড়ায় পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক এবং তার স্কুল কলেজের সহপাঠীরা। বিবেকের তাড়নায় সহপাঠী নুরইসলাম, শাহিন, তুষার, ইকরামুল, তাওহিদ, সাকলাইন, আশা, সুমন, সাগর, মজিবর, ওলিউল্লাহ, ইব্রাহীম, আলমগীর, হাসান, নিরব, আজাহার, শুভ, রফিকুল, পলাশ, মামুন, মুক্তা, মৌসুমি, কাকলী, শাহানাজ, লিজা, আলিফা, রিতুসহ অনেকেই তার পাশে দাড়ায়। সূত্র জানায়, সোমবার জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার পলির পরিবারের হাতে তার চিকিৎসার জন্য আবারও ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। এদিকে মেধাবী পলির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে জীবনের বাকি সময়গুলো যেন পরিবার কিংবা সমাজের বোঝা না হয় সহপাঠিরা তার জন্য এখন থেকেই কি ভাবে পলিকে সাবলম্বি করে দাড় করানো যায় তা নিয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাদের এ উদ্যোগকে সমালোচনার চোখে না দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া করকার আমাদের।