সুন্নতে খতনায় মাংসের বদলে বারবার ‘ঝোল’ দেয়ায় মারামারি : আহত ৪
স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে বার বার ঝোল দেয়া নিয়ে খাবার পরিবেশকদের সঙ্গে আমন্ত্রিতদের কয়েক দফা মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের রাশিদুল ইসলামের বাড়িতে ঘটে এ ঘটনা। বাড়িতে তার ছেলে রাফির সুন্নতে খতনা উপলক্ষ্যে দাওয়াতের অনুষ্ঠান চলছিল। আহতরা হলেন-উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের আকবরের ছেলে মাহফুজুর রহমান শান্ত (২০) ও চান্নু হোসেন (৩৫), কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৫), ইয়াকুবের ছেলে জামিরুল (১৯)। তাদের মধ্যে শান্তর শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে এবং তার মাথায় কয়েকটি সেলায় দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাশিদুলের ছেলে রাফির সুন্নতে খতনা উপলক্ষ্যে অন্তত ৩শ’ স্বজন ও প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। বিকেলে সাজানো প্যানেলে খাওয়া দাওয়া চলছিল। সেখানে প্রতিবেশী আকবরের স্ত্রী, দুই সন্তান শান্ত ও চান্নুসহ তার পরিবারের অনন্ত ৮ জন এক টেবিলে খাচ্ছিলেন। সেখানে খাবার পরিবেশক ছিলেন রাফির মামা শহিদুল। সে সময় চান্নু ঝোলের মাংসের গামলা বদল করে ভালো মাংস আনতে বলেন। শহিদুল কয়েকবার গামলা বদল করে দেন। তবে প্রত্যেকবার গামলায় অতিরিক্ত ঝোল (গ্যাদরানী) থাকা নিয়ে তাদের বাগবিত-া হয়। এরপর অজ্ঞাত একজন চেয়ার দিয়ে আঘাত করে শান্তর মাথা ফাটিয়ে দেন। এ নিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তাদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে আহত শান্ত বলেন, ‘বার বার মাংসের বদলে ঝোল দিয়েছিল। এ নিয়ে বাগবিত-ার এক পর্যায়ে আমার মাথায় চেয়ার দিয়ে আঘাত করে ফাটিয়ে দিছে প্রতিপক্ষরা। আমি থানায় মামলা করব। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ধারে রাফির ছবিসহ সজ্জিত গেট। বাড়ির পিছনে বাগানের ভিতরে করা হয়েছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের ভিতরে ভাঙা চেয়ার টেবিল পড়ে আছে। দুপক্ষের চলছে বাগবিত-া। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। ভিড় করেছেন উৎসুক জনতা ও স্বজন।’
এসময় রাফির বাবা রাশিদুল বলেন, ‘মাংসের ঝোল নিয়ে প্যান্ডেলে নিজেরা নিজেরাই মারামারি ও ভাঙচুর করেছে। অনুষ্ঠানের আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। আমি শান্তি চাই।’
আহত চান্নু হোসেন বলেন, ‘চাচাতো ভাইয়ের ছেলে রাফির সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। মাংস চাওয়ায় রাফির মামা শহিদুল ও তার লোকজন আমাদের ব্যাপক মারপিট করেছে। মাথা ফাটিয়েছে। আমরা বিচার চাই।’ অভিযোগ অস্বীকার করে রাফির মামা শহিদুল বলেন, ‘বার বার মাংসের গামলা বদল করে দেয়ার পরও চান্নু অভিযোগ করতে থাকে। এ নিয়ে তর্কাতর্কি করতে করতে চান্নুরা আমাকে মারধর করে জামা ছিঁড়ছে, চোখ ফুলিয়ে দিয়েছেন। ভিড়ের মধ্যে কে কার মাথা ফাটিয়ে তা জানি না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, ‘অনুষ্ঠান বাড়িতে বিকেলে সাধারণত ভালো খাবার থাকে না। অতিরিক্ত ঝোলের মাংসই থাকে। এ নিয়ে নিজেরা নিজেরা ভাঙচুর ও মারামারি করেছে। বিষয়টি দুঃখজনক।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক মো. সোহাগ শিকদার বলেন, ‘সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে বার বার ঝোল (গ্যাদরানী) দেওয়া নিয়ে খাবার পরিবেশকদের সঙ্গে আমন্ত্রিতদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.