সভাপতি পদে ২ ও সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন ৪ প্রার্থী

জমে উঠেছে দর্শনা কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ভোট

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন। এ নির্বাচন মানেই শ্রমিক-কর্মচারীদের আনন্দ-উৎসব, জমকালো আয়োজন ও হৈ হুল্লোর। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর কিছুটা ঝিমিয়ে থাকলেও গত দুদিন ধরে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের উপস্থিতিতে সরগম হয়ে উঠেছে কেরুজ আঙিনা। প্রচারণায় কারো থেকে কেউ কমতিতে নেই। এরই মধ্যে পোস্টারে পোস্টারে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কেরুজ এলাকা। শ্রমিক সংগঠনগুলোতে ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় যেন জানান দিচ্ছে ভোটের উৎসব। এবার সভাপতি পদে ২জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৪জন ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া কমিটির ২৫টি পদের বিপরিতে লড়ছেন ৫৫জন প্রার্থী। পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে কেরুজ এলাকায়। এছাড়া সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহল রয়েছে অব্যাহত। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। এ নির্বাচনের বাতাশ শুধু দর্শনা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ বাতাশ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলার আনাচে-কানাচে। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাপ, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের আমেজ বাড়িয়ে তোলে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের অনেক আগে-ভাগেই প্রার্থী, ভোটার ও সমর্থকদের দলবদ্ধ মহড়াই শহরবাসীকে মনে করিয়ে দেয় কেরুজ নির্বাচনের কথা। সাধারণসভার পর থেকেতো যেন কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে সকলে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে প্রায় সবকটি সংগঠনের পক্ষে মিছিলের মহড়ার হিড়িক পড়ে যায়। দর্শনা যেন পরিণত হয়েছে মিছিলের শহরে। প্রতিদিন প্রায় সবকটি সংগঠনের কর্মীসভা চলছে। নিজের অবস্থান মজবুত বুঝাতেই এ কৌশল অবলম্বন করে থাকেন শ্রমিক নেতারা। সংগঠন কার্যালয় ও মিছিল-মিটিংয়ে ভোটারদের পাশাপাশি বহিরাগতদের অংশ গ্রহণ লক্ষণীয়। নিদে-খিদে বন্ধ রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ঝুলি। নির্বাচিত হলে সকলের দাবিই পূরণের আশ্বাসের কথা নতুন কিছু নয়। এ কথা পুরাতন হলেও সকলকেই তালিকার ১ নম্বরেই রাখার প্রতিশ্রুতিটাও যেন রুটিন মাফিক বলতে ভুল হয়না প্রার্থীদের। প্রশ্ন উঠেছে সকলেই তালিকার ১ নম্বরে থাকলে তালিকার পরের নম্বরগুলোতে কাদের নাম থাকবে? আসলে কেরুজ নির্বাচন মানেই চাওয়া-পাওয়া আর পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ। এ ক্ষোভকে পুজি করেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দল বদলের পালার ঘটনাও বহুদিনের। এ পালায় পাল্লা দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে থাকে এক শ্রেণির সুবিধালোভী ভোটার। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার গরম বাতাশ শুধু কেরুজ আঙিনায় সীমাবদ্ধ নেই। এ বাতাশ জেলার সর্বত্র বইছে। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল শো-ডাউনে সরগম অবস্থায় পরিণত হয়েছে কেরুজ আঙিনা। এ নির্বাচনে ইউনিয়নের ২৫টি পদের বিপরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৫জন প্রার্থী। এ ভোটে ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ডের সদস্য পদের জন্যও সমগ্র এলাকার ভোটারের ভোট দেয়ার বিধান করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ (হারিকেন) ও তৈয়ব আলী (চাঁদতারা) প্রতীকে। সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (চাকা), হাফিজুর রহমান (চশমা) জয়নাল আবেদীন নফর (মই), আব্দুল মান্নান (ছাতা) প্রতীকে। ২টি সহ-সভাপতি পদের বিপরিতে এএসএম কবির (মাছ), মফিজুল ইসলাম (চেয়ার) ও রেজাউল করিম (হাতপাখা), সাঈদ আহমেদ (কোদাল) প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। ২টি সহ-সাধারণ সম্পাদকের বিপরিতে মোস্তাফিজুর রহমান (গোলাপফুল), আব্দুল কুদ্দুস (টেবিল), ইসমাইল হোসেন (গরুর গাড়ী), খবির উদ্দিন (কলস) ও বাবুল আক্তার (তালাচাবি) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম আরুক (কাপ-পিরিস), মহিদুল ইসলাম (সিলিং ফ্যান) ও সেলিম খান (প্রজাপতি) প্রতীক নিয়ে মাঠ চষছেন। দপ্তর সম্পাদক পদে আতিয়ার রহমান (বই) ও সালাউদ্দিন সনেট (উড়োজাহাজ) প্রতীকে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি দোয়া চাচ্ছেন। প্রচার সম্পাদক পদে মিজানুর রহমান (মোড়গ) ও রবিউল ইসলাম (কুড়েঘর) প্রতীকে লড়ছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে আবু সাঈদ (কাঁঠাল), রেজানুর রহমান (ট্রাক) প্রতীকে ভোটের মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে আক্তার খান (বাস), নুর আলী (গ্লাস) ও শাহবুদ্দিন (গোলটুপি)। ২নং ওয়ার্ডে আব্বাস উদ্দিন (হাঁস), আমিনুল ইসলাম (হাতঘড়ি) ও বাবর আলী (বেলচা)। ৩নং ওয়ার্ডে আব্দুস সালাম (টর্চলাইট), বাবুল আক্তার (গাভী), শফিকুল ইসলাম (বাঘ) ও শরিফুল ইসলাম (হারমুনিয়াম)। ৪নং ওয়ার্ডে আবু সিদ্দিক (আম), আসাদুজ্জামান (জগ) ও মতিয়ার রহমান (বাল্প)। ৫নং ওয়ার্ডে ফরহাদ হোসেন খান (ফ্রিজ), মাঈনুদ্দিন (মাইক), মাহামুনুল হাসান (তীর), সাঈফ উদ্দিন সুমন (ফুটবল), সাহেব আলী শিকদার (সেলাই মেশিন) ও হারেজুল ইসলাম (আপেল)। ৬নং ওয়ার্ডে আসাদুল হক ব্যাকা (তরমুজ), নুরুল ইসলাম (আখেরআটি), মাজেদুল ইসলাম ডাবলু (কেটলি), মজিবর রহমান (টিউবওয়েল) মোহন আলী (ঢোল) ও মনিরুল ইসলাম ঝন্টু (কলা)। এবং ৭নং ওয়ার্ডে আজাদ আলী (কলম), ইদ্রিস আলী (আলমারি), তারাপদ বিশ্বাস (লাটিম), জাহিদুল ইসলাম (ঢেকি) ও জহিরুল ইসলাম (হাতুড়ি) প্রতীক নিয়ে অবিরাম ছুটছেন ভোটারদের কাছে। চাচ্ছেন দোয়া ও ভোট। চিনিকলের হিসাব, প্রসাশন ভান্ডার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলো নিয়ে গঠিত ৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ১৪৭জন। এবারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন, মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার, সদস্য সচিব চিনিকলের প্রকৌশলী (পরিবহন) আবু সাঈদ, সদস্য উপ-ব্যবস্থাপক (পার্সনাল) আল আমিন, উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) শেখ জাবেদ হাসান ও সম্প্রতি রাজশাহী চিনিকলে সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ডিস্টিলারি জহির উদ্দিন বদলি হওয়ায় সেখানে নতুন করে নেয়া হয়েছে জুনিয়র অফিসার (ভূমি) আফজালুর রহমানকে। ১৪ মার্চ কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে বিরতিহীনভাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More