মাজেদুল হক মানিক: এক সময় সকালে ধান কেটে ওই ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে ঢেকিতে চাল তৈরী করে রাতে ভাত খাওয়া হয়েছে। আমন ধান কাটার আগ পর্যন্ত ভাতের অভাব পূরণে বেশ কিছুটা ভূমিকা রাখতো ভাদ্র মাসে কাটা আউশ ধান। যার নাম ভাদ্রে ধান হিসেবে পরিচিতি ছিলো। সেই সময় আজ আর নেই। এখন এক বিঘা জমিতে এক মরসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে একটি ছোট পরিবারের সারা বছরের ভাতের চাহিদা পূরণ হয়। তাই ভাদ্রের ভাতের জোগান দেয়া সেই আউশ ধান এখন চাষিদের কাছে আর্থিক ফসল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ আগে বাংলাদেশের মানুষের ভাতের অভাবের বিষয়টি এমননিভাবেই বলছিলেন মেহেরপুর গাংনীর পূর্ব মালসাদহ গ্রামের নুরু মিয়া।
চলতি মরসুমে মেহেরপুর জেলায় যেমন বেড়েছে আউশ ধানের আবাদ তেমনই বাম্পার ফলন আর ভালো দামে চাষি পরিবারে স্বস্তি নেমে এসেছে। আমন ও বোরো (চতে) মরসুমের মধ্যবর্তী সময়ে কৃষকের হাতে তেমন কোনো ফসল থাকে না। এ সময়ে অনাবাদি থাকা জমিতে আউশ ধান পেয়ে চাষিদের বাড়তি আয় হচ্ছে বলে জানালেন কয়েকজন আউশ ধানচাষি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় এবার আউশ ধান আবাদে আবারও বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকুল আবহাওয়ায় আবাদ খরচ সাশ্রয় ও ধানের দর ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকেরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ক্ষতি মোকাবেলায় আউশ আবাদ বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
চলতি মরসুমে জেলায় আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২০ হাজার ৮৩০ হেক্টর আবাদ হয়েছে। যা গেলো কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বোরো ও আমন ধান আবাদের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে আউশ ধান ঘরে আসায় স্বস্তি বিরাজ করছে কৃষক পরিবারে। উচ্চফলনশীল ব্রি ধান ৪৮, ব্রি ধান ৮২ ও ব্রি ধান ৮৫সহ বিভিন্ন জাত আবাদের মধ্য দিয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ফলন বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে স্বল্প সময় ও অল্প খরচে আউশ ধান চাষ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলতি বছর থেকে তাই আউশ ধান কাটা উৎসব হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। গেলো ২২ আগস্ট মেহেরপুর জেলার ধান কর্তন অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সারাদেশের উৎসব উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এ ধরনের উদ্যোগ কৃষকদের আরও অনুপ্রাণিত করবে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কৃষকরা। চলতি বছরে আউশ ধান আবাদে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
আউশ ধানচাষি ভোমরাদহ গ্রামের মিলন হোসেন বলেন, ব্রি ধান ৪৮ আউশের জনপ্রিয় জাত। এর পাশাপাশি চলতি মরসুমে ব্রি ধান ৮২ ও ব্রি ধান ৮৫ ভালো ফলন হয়েছে। এতে চাষিদের মাঝে আউশ ধান আবাদে আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বীজ, সার ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে বিভিন্ন মাঠে এবার প্রদর্শনী প্লট করা হয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানো ও অল্প খরচে আউশ আবাদ হয়; বিধায় আউশের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এমনটি জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরীন পারভীন বলেন, আউশ ধানচাষি কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি, বাম্পার ফলন, বিচুলি বিক্রি করে বাড়তি অর্থ ও সু-স্বাদু চালের জন্য কৃষকরা আউশ আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
অপরদিকে ব্রি ও বিনা থেকে প্রতি বছর নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন এবং সরকারি নানা উদ্যোগ আউশ আবাদে এক মাইলফলক বলে উল্লেখ করলেন গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘করোনাকালে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার আলোকে সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে তৎপরতায় আউশ আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারা আমরা অব্যহত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।