মেহেরপুরে চারজনসহ চুয়াডাঙ্গায় আরও ১৬ জন শনাক্ত
হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন কুষ্টিয়ার এক গাড়িচালকের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় দুই আনসার সদস্যসহ আরও ১৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২৩ জনে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলায় আরও ৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে, কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে বিআরবি শিল্প প্রতিষ্ঠানের এক গাড়িচালকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান গতকাল মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে ৪০ জনের নমুনার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৬ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন সদর উপজেলার ৮ জন, জীবননগরের ৫ জন, আলমডাঙ্গার একজন ও দামুড়হুদার দর্শনায় দুজন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার একজন, থানা কাউন্সিলপাড়ার ৩ জন, গুলশানপাড়ার একজন, দৌলাতদিয়াড়ের একজন ও ডিঙ্গেদহ আনসার ক্যাম্পের দুই সদস্য। আলমডাঙ্গার নহরদিয়া দুর্গাপুরের একজন, দর্শনা কেরু অফিসার্স মেসের দুজন, জীবননগর উপজেলার ৫ জনের মধ্যে রয়েছেন বাঁকার ৩ জন, মনোহরপুরের একজন ও দৌলতগঞ্জের একজন। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও চারজন নারী। এদের বয়স ২৩ থেকে ৬৩ বছরের মধ্যে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছেন ১৫ জন ও হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১০১ জন এবং ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন দুজন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন ইতালি ফেরত এক যুবক। তার বাড়ি আলমডাঙ্গায়। জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৩ জন নারী-পুরুষ। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০২ জন ও মারা গেছেন ৩ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয় ৩ জনকে। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন একজন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলায় আরও ৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ১১২ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মেহেরপুর শহরের ফৌজদারী পাড়ার একজন, স্টেডিয়ামপাড়ার একজন, গাংনী বিআরডিবি অফিসের এক মাঠকর্মী ও মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের একজন। সিভিল সার্জন আরও জানান- কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিপিআর ল্যাব থেকে ২০টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। যার মধ্যে চারজনের দেহে করোনা পজেটিভ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের বাড়িঘর লকডাউন করা হবে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হোম আইসোলেশনে তিনি মারা যান। সিরাজুল ইসলামের (৫০) বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের বারখাদা কালিতলা এলাকায়। তিনি কুষ্টিয়ার বিআরবি শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। হাসপাতালসূত্র জানায়, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরির প্রাপ্ত ফলাফলে গত ১৩ জুলাই সিরাজুল ইসলামের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর নিজ বাড়িতেই হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হঠাৎ প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। এদিকে কুষ্টিয়া জেলা এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শহর ও গ্রামাঞ্চলের সর্বত্রই এখন করোনা রোগীর ছড়াছড়ি। সরকার ঘোষিত রেড জোনের আওতায় পুরো কুষ্টিয়া শহর এলাকা টানা ১৫ দিন লকডাউন বাস্তবায়ন করলেও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। বর্তমানে জেলায় করোনা রোগী সহস্রাধিক ছাড়িয়ে গেছে। করোনা কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত ১ হাজার ১৯ জন। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সত্ত্বেও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না এ মহামারী। ফলে জেলাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে করোনা ভীতি। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এএইচএম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে সিরাজুল ইসলামের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।