চুয়াডাঙ্গায় বৃক্ষরোপণ ও জলাশয়ে মাছ অবমুক্তকরণকালে জেলা প্রশাসক
বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পুনঃখননকৃত চিত্রা নদীর পাড়ে বৃক্ষরোপণ ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ অবমুক্ত করণের উদ্বোধন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চুয়াডাঙ্গার আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় কুকিয়াচাঁদপুর গ্রামে অবস্থিত চিত্রা নদীর পাড়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথি নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রকৃতি সবসময়ই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার সে পরিবেশকে রক্ষা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে বৃক্ষরাজি অর্থাৎ তার বিস্তৃত বনাঞ্চল। কিন্তু সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এবং নিজেকে সভ্য করে তুলতে মানুষ অবাধে আঘাত হেনেছে প্রকৃতির রক্ষাকবচ এই বৃক্ষের ওপরে। ফলে প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া দেখতেও আমরা বাধ্য হয়েছি এবং হচ্ছি। একের পর এক আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হচ্ছে। বৃক্ষের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের স¤পর্ক। তিনি আরও বলেন, আমাদের জীবন ও জীবিকার জন্য বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বৃক্ষ সমস্ত প্রাণীর খাদ্য যোগান দেয়। বিশাল এ প্রাণীজগৎকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অক্সিজেন দেয়। বন্যা, ক্ষরা, ঝড় নিয়ন্ত্রণ করে বৃক্ষ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। মাটিকে উর্বর করে তোলে। শুধু তাই না জীবন রক্ষাকারী ভেষজ বিভিন্ন ওষুধের মূল্যবান উপাদানও বৃক্ষই সরবরাহ করে থাকে। বৃক্ষহীন পৃথিবীতে আমরা কখনই বেঁচে থাকতে পারবো না। জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই বনায়নের ওপর অর্থাৎ বৃক্ষরোপণের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যক্তিগত পারিবারিক উন্নয়ন এবং জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমাদেরকে বৃক্ষের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করতে হবে। শুধুমাত্র সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়েই নয় বরং ব্যক্তিগতভাবেও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে এবং সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অপরদিকে, মাছ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় আবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইতিহাস সাক্ষী দেয় আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। সময়ের পরিক্রমায় মাছ নিয়ে আমরা মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলাম। তিনি বলেন, সরকারের সুষ্ঠু ও বাস্তব ভিত্তিক যৌক্তিক নীতি এবং কর্মসূচির কারণে মাছ উৎপাদনে এখন আমরা গর্বিত পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারবো। ব্যক্তি পর্যায়ে সামগ্রিক কাজের গুরুত্ব এসে নির্ভর করে খাদ্য চাহিদা গ্রহণের ওপর। আবার রাষ্ট্রীয় পার্যায়েও একইভাবে দেশের জনসমষ্টির খাদ্য যোগান মুখ্য বিষয় হয়ে দেখা দেয়। আর প্রতিটি উন্নয়ন খাতের ওপর যখন খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মুখ্য হয় তখন আর ¯পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে সবার আগে আমাদের খাদ্য চাহিদা পূরণই হচ্ছে সব কর্মকা-ের মূলমন্ত্র। সুতরাং সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, চাহিদানুযায়ী খাদ্যশস্য যেমন খাদ্য নিরাপত্তার পথকে সুগম করে তেমনই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৎস্য খাত কৃষিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। কেননা দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী যেমন এ খাতের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে তেমনি খাদ্যের তালিকায় প্রোটিনের জোগানের বিষয়টিও নিশ্চিত করছে প্রতিনিয়ত। আবার মাছ খাদ্য চাহিদাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে খাদ্যের পরিপূরক স¤পূরক খাবার হিসেবে। তখন মাছভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তা আরো সুদৃঢ় হবে। আমাদের গ্রামীণ উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। আমরা আমাদের দেশীয় অভিবাসনকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবো। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তিনি আরও বলেন, কালের আবর্তে বিলীন হওয়ার পথে দেশের অনেক শাখা প্রশাখা নদী। মৃত এবং দখলকৃত নদী পুনঃউদ্ধার এবং খননের জন্য বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারই অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গার মৃতপ্রায় নদীগুলো খণনের কাজ শুরু হয়। তার মধ্যে অন্যতম দর্শনা মাথাভাঙ্গা গোপালখালী ব্রিজ নদীর উৎস মুখ থেকে খাড়াগোদা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২৩ কি.মি. চিত্রা নদী অবস্থিত। খননের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় চিত্রার দু’পাড়ে আজ সবুজ ঘাসের বেষ্টনি সৃষ্টি হয়েছে। ঘাসের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন চিত্রার পাড়ে ফলজ ও বনজ গাছ লাগানো হচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করবে। সেই সাথে নদীর অবমুক্ত জলাশয়ে মাছ ছাড়া হচ্ছে। এলাকার মানুষ যাতে হারিয়ে যাওয়া সেই মাছের স্বাদ ও গন্ধ এবং পুষ্টি ফিরে পায়। গাছগুলো রক্ষানাবেক্ষণা করবে পাড়ের পাশে যাদের জমি আছে তারা। গাছ বিক্রি করা বাদে ফল ফলাদি ভোগ করবে তারা। সেই সাথে কোনোপ্রকার জাল দিয়ে মাছ ধরা চলবে না। বারোমাস মানুষ যেনো বর্শি দিয়ে মাছ ধরে খেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার দৃষ্টিনন্দন চিত্রা পুনঃখণনের জন্য ঠিকাদার বিশ্বজিৎ সাহাকে ধন্যবাদ জানান। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমজাদ হোসেন, সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খাইরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুবীর কুমার ভট্টাচার্য, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন, ঠিকাদার মাখালডাঙ্গা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শ্রী বিশ্বজিৎ সাহা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আ.লীগ নেতা বাবুল আক্তার, আনারুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ছানোয়ার হোসেন, মুক্তার হোসেন, হাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আহসান হাবিব প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা এবং সদর উপজেলার বেগমপুর, শঙ্করচন্দ্র ও তিতুদহ ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে প্রায় ২৩ কি.মি. চিত্রা নদী। নদীকে পুনঃজ্জীবিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায়) শিরনামে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যায়ে দর্শনা উৎসমুখ থেকে কালুপোল পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার চিত্রা নদীর পুনঃখনন কাজ শুরু হয়। আর এ কাজের তত্বাবধান করছে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড। চিত্রা খনন ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে চিত্রার দু’পাড়ে ৩২ হাজার ফলজ ও বনজ গাছ লাগানো হচ্ছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ