আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ কর্তৃক আয়োজিত সদ্য প্রয়াত বিএনপি নেতা কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মীর মহি উদ্দীনের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের ব্যানারকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দোয়া অনুষ্ঠানের ব্যানারে সচেতনভাবে মীর মহি উদ্দীনের নামের পূর্বে ‘প্রতিষ্ঠাতা’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে ‘সাবেক সভাপতি’। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে মীর মহি উদ্দীনকে নানাভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে। মৃত্যুর পরও কলেজটির প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে এমন জঘন্য ষড়যন্ত্র, অকৃতজ্ঞতা ও নীচতা খোদ কলেজটির অভ্যন্তরে ও শহরে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে যে, কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ আশুরা খাতুন পাতা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে এমন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।
কে না জানেন- আলমডাঙ্গা মহিলা কলেজের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা মীর মহি উদ্দীন। তার একাগ্র শ্রম-ঘামে প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হয়েছে আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ। ফ্যাসিস্ট পূর্ববর্তী সময়ে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ছিল এই কলেজ কেন্দ্রীক। মীর মহি উদ্দীনের সাথে তার কিছু রাজনৈতিক সহচর, বন্ধু-শুভাকাঙ্খী ও শহরের সচ্ছল পরিবারের একদল শিক্ষিত বেকার ছেলেকে সাথে নিয়ে কলেজটি দাঁড় করিয়েছিলেন। সেই সকল তরুণরাই ওই কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিজকে নিয়োজিত করেছেন। সেই আত্মত্যাগের ইতিহাস বেশি পুরাতন নয়। সকলের কমবেশি জানা। মীর মহি উদ্দীন শুধু রাজনীতিকই নন, সফল ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় যে শ্রম, যে মেধা, যে সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তা যদি অন্য ব্যবসায় করতেন, নিঃসন্দেহে অনেক বেশি আর্থিক সুবিধা পেতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। কেন?
মীর মহি উদ্দীন এই সমাজের আর দশটা মানুষের মতই মানুষ ছিলেন। তারও কিছু ভুল আছে। তার প্রতিপক্ষও আছে। অনেক কারণে তাকেও সমালোচনা করা যেতেই পারে। কিন্তু একটা বিষয় অস্বীকার করার উপায় নেই তা হলো তিনি প্রকৃত অর্থেই শিক্ষানুরাগী ছিলেন।
আলমডাঙ্গা অঞ্চলে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এই একটা কারণেই। তিনি আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, আলমডাঙ্গা পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়, এনায়েতপুর বাড়াদী মীর খোস্তার আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবেদা বেগম প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নির্মাণ করেন। এছাড়াও, বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাসকররা কলেজ ও জামজামি কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখেন। এরশাদপুর একাডেমি, আলমডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ (বর্তমানে সরকারি), হাটবোয়ালিয়া স্কুল এন্ড কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার ও সম্প্রসারণে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান সত্যিকার অর্থে অনন্য। নির্দ্বিধায় বলা যায় মীর মহি উদ্দীন এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
শিক্ষায়, শ্রমে ও মেধায় তিনি অন্য রাজনীতিকদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলেই তিনি ছিলেন সবক্ষেত্রে ঈর্ষনীয় সফল্যের অধিকারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় তিনি অতিরিক্ত সুবিধা পেতেন উন্নয়ন কর্মে। বিশেষ করে মন্ত্রণালয়সহ অফিসিয়াল কাজে। তার অনেক সহপাঠী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তার কাজ করতে সুবিধা হতো। এই সুযোগ তিনি হেলায় হারিয়ে যেতে দেননি। সমাজের জন্য, নিজের জন্য কাজে লাগিয়েছেন।
গত ৬ এপ্রিল মীর মহি উদ্দীন দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেছেন। পরদিন ৭ এপ্রিল তার রুহের মাগফেরাত কামনায় আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। বেশিরভাগ শিক্ষক কর্মচারী এ দোয়া অনুষ্ঠানের কথা জানতেন না। অধ্যক্ষাসহ দোয়া মাহফিলে ২০ জন শিক্ষক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে যে, ওই দোয়া মাহফিলের ব্যানারে মীর মহি উদ্দীনের নামের পূর্বে শুধু সাবেক সভাপতি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা সাধারণ কোন ভুল হিসেবে অভিযোগকারীরা মনে করছেন না। তাদের দাবি- সচেতনভাবেই ‘প্রতিষ্ঠাতা’ লেখা হয়নি। এটা অধ্যক্ষ ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকেই করেছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও মীর মহি উদ্দীনের ভাতিজা মীর উজ্জ্বল বলেন, ‘সকলেই জানে যে মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কে? প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখ না করে শুধু সাবেক সভাপতি উল্লেখ করা এমনিতে হয়নি। এটা এই জ্বলজ্যান্ত সত্যকে চেপে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখতে চেয়েছেন অধ্যক্ষ। তিনি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে এগুলো করছেন। গত সংসদ নির্বাচনের আগে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যেক্ষের পদ থেকে আমার চাচি জিয়াউন নাহারকে (মিসেস মীর মহি) এমপি ছেলুন অবৈধভাবে সরিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বর্তমান অধ্যক্ষাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা চলছে। মামলায় পরাজিত হয়ে পুনরায় আপিল করেছেন অধ্যক্ষ। তিনি অবৈধভাবে চাকরিতে টিকে থাকতে না কৌশল করছেন। এটা নিন্দনীয়।’
আলমডাঙ্গা মহিলা কলেজের ইংরেজির প্রভাষক ও উপজেলা জামায়াতের আমির শফিউল আলম বকুল বলেন, ‘নিজেও আমি জানতাম না, উপস্থিতও ছিলাম না। ফেসবুকে ছবি দেখে অধ্যক্ষাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন যে, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি নন, তাই প্রতিষ্ঠাতা দিইনি। সে সময় আমি বলেছিলাম যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। পৌর মেয়র ছিল সে সময় গনু মিয়া। কৌশলগত কারণে গনু মিয়াকে সভাপতি করে রেখেছিলেন মীর মহি উদ্দীন। কিন্তু মীর মহি উদ্দীনের নিরলস প্রচেষ্টায় কলেজটি গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি না লিখলেও শুধু প্রতিষ্ঠাতা লেখা উচিত ছিল। এ ব্যাপারটি কলেজের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছিলাম।’
আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু বলেন, ‘যার যা প্রাপ্য সম্মান, তাকে তা দিতে হবে। মীর মহি উদ্দীন প্রতিষ্ঠাতা এটা অধ্যাক্ষা অস্বীকার করলেই ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যাবে তা ঠিক না। এ হীনমন্যতা তিনি না দেখালেও পারতেন।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘আমিও লোকমুখে বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষার সাথে কথাও বলেছি। এটা উনি ঠিক করেননি।’
অধ্যক্ষ আশুরা খাতুন বলেন, ‘বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। পূর্বে মীর মহি উদ্দীন ছিলেন। সেই ভাবেই আমি সাবেক সভাপতি লিখেছি। তাকে শ্রদ্ধা করেই দোয়া অনুষ্ঠান করেছি। এতটা বিষদভাবে ভেবে দেখিনি। এটা আমার ভুল।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
কুষ্টিয়ায় চালকলমালিক নেতার বাড়িতে গুলি : নেপথ্যে হাটের ইজারা
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.