না ফেরার দেশে চলে গেলেন চুয়াডাঙ্গার খ্যাতিমান শিক্ষক এলাহি বকস : আমেরিকার মাটিতে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার: না ফেরার দেশে চলে গেলেন চুয়াডাঙ্গার খ্যাতিমান শিক্ষক এলাহি বকস (৮২)। শ্রদ্ধেয় এই মানুষ গড়ার কারিগর জীবনের শেষ সময়গুলোতে বাংলাদেশের মাটিতে না থাকলেও আমেরিকার নিউইয়ার্কে বসবাস করেও ভোলেননি চুয়াডাঙ্গার কথা। মাত্র মাস খানেক আগেই তিনি নিউইয়র্কে পাড়ি জমান বড় ছেলে শুভ্রর বাসায়। মিষ্টভাষী ও পরোপকারী এই গুণী শিক্ষক ১৯৪৭ সালে দেশ (পাক-ভারত) ভাগের ৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৪২ সালের ২৮ আগস্ট দামুড়হুদার দলিয়ারপুরে মরহুম আজিজুল হক বিশ্বাসের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। যৌবনে তিনি কমোনিজম রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি লেখাপড়াটি ভালোভাবেই শেষ করেন। সে সময় রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি অর্জন করে চুয়াডাঙ্গা একাডেমি স্কুলে চাকরি নেন। একাডেমি স্কুলে চাকরির সুবাদে তিনি চলে আসেন চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমাহল (বর্তমানে কাঠপট্টি এলাকায়) পাড়ায়। এ চাকরির সুবাদে মানুষ গড়ার দায়িত্ব হাতে তুলে নেন তিনি। খ্যাতিমান এই শিক্ষক শিক্ষকতা জীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে শাসন ও আদরের ছলে শিখিয়েছেন লেখাপড়া। মরহুম এই শিক্ষকের জ্ঞানস্রোতে স্নাত হয়ে অনেকে হয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন শেষ করে দিন তারিখ ঠিক রেখেই অর্থাৎ ২০০২ সালে ২৮ আগস্ট অবসর নেন শিক্ষকতা পেশা থেকে। এতদিনে অন্যের সন্তানকে মানুষ করার পাশাপাশি নিজের দুটি ছেলে কেউ মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছিলেন। ছোট ছেলে উজ্জ্বলকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রিতে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করান এবং বড় ছেলে শুভ্রকে পড়ালেখার পথ ধরে পাঠিয়ে দেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে। শুভ্র সেটেল হয়ে যান আমেরিকাতেই। বসবাস করেন আমেরিকার নিউইয়ার্কে। শিক্ষকতা পেশা শেষ করে বাকি জীবনগুলো দেশের মাটিতেই কাটাতে চাইছিলেন। কিন্তু ছেলে শুভ্রর জরাজরিতে সহধর্মিণীকে (চুয়াডাঙ্গা রেল বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক গুলনাহার বেগমকে) নিয়ে পাড়ি জামান আমেরিকার নিউইয়ার্কে। তবে নিউইয়র্কে বসবাস করলেও গুনী এই শিক্ষকের মন কিন্তু পড়ে থাকতো চুয়াডাঙ্গার মাটি ও মানুষের কাছে। মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগেও নাকি এলাহি বকস বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যেতে চেয়েছিলেন। তেমনটিই না-কি জানিয়েছিলেন তার বড় ছেলে শুভ্র। কিন্তু তার আগেই সকলকে কাঁদিয়ে এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় আমেরিকার নিউইয়ার্কে ছেলের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেখানেই মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা একাডেমির সহকারী প্রধান শিক্ষক সেলিনা খাতুন জানান, মরহুম এলাহী বকস স্যার ওই প্রতিষ্ঠানে আমার যোগদানের মাত্র দুইদিন আগে অর্থাৎ ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট অবসর গ্রহণ করেন। চুয়াডাঙ্গা একাডেমিতে আমি যোগদান করি ২০০২ সালের ১ সেপ্টেম্বর। এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার আগে ও পরে এলাহি বকস স্যার সম্পর্কে অনেক ভালো গুণের কথা জেনেছি ও শুনেছি। ভালো মানুষের গুণের কদর করা শিক্ষকতা পেশার একটি অন্যতম গুণ। সে কারণেই আমি সর্বপ্রথম চুয়াডাঙ্গা একাডেমির সাবেক শিক্ষকদেরকে সাধ্যমত সম্মান জানিয়ে সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করেছিলাম। যে কাজটি শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এলাহী বকস স্যারের বিদায় সংবর্ধনা দেয়ার মধ্যদিয়েই শুরু হয়েছিল। তাই স্যারের এই মৃত্যু সংবাদটি যখন জানতে পেলাম তখন যেন মনে হলো নিজের অন্তর থেকে কি একটা যেন হারিয়ে গেল। চুয়াডাঙ্গা একাডেমি স্কুলের বর্তমান শিক্ষকদের পক্ষ থেকে স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More