দর্শনা থানা প্রতিষ্ঠা ও সাফল্যের পৌনে তিন বছর
১৩ মাসে ২৯৫ মধ্যে মাদক মামলা ১৫৬ : বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ৭৫৭
দর্শনা অফিস: দর্শনা থানা প্রতিষ্ঠার বয়স দেখতে দেখতে পৌনে তিন বছর। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ থানায় পর্যায়ক্রমে দুজন অফিসার ইনচার্জ দায়িত্ব পালন করেছেন। দর্শনা থানার প্রথম ওসি মাহব্বুর রহমান কাজলের বদলির পরই যোগদান করেন এএইচএম লুৎফুল কবীর। দর্শনা থানায় যোগদানের ১৩ মাস পেরিয়ে গেছে লুৎফুল কবীরের। এ দীর্ঘ সময়ে ওসি লুৎফুল কবীরের সাফল্যের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন মামলায় ৭৫৭ জনকে গ্রেফতারসহ মাদকদ্রব্য উদ্ধার। দর্শনা শহর নানাভাবে ঐতিহ্য মন্ডিত। জেলার অতিগুরত্বপূর্ণ শিল্প শহর হিসেবে দর্শনার পরিচিতি গোটা দেশেই। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের নিরলস প্রচেষ্ঠার ফসল হিসেবে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে থানা হিসেবে উন্নিত হয় গত ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারিতে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে থানার উদ্বোধন করেন। থানার প্রথম অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইন্সপেক্টর মাহাবুর রহমান কাজল। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা বিভাগে বদলী হন মাহবুর রহমান কাজল। একই দিনে ওই বিভাগের ইন্সপেক্টর এএইচএম লুৎফুল কবীর দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। দুজন ইন্সপেক্টর, একদল চৌকস এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল নিয়ে সন্ত্রাস, অস্ত্র, ছিনতাই, ডাকাতি, ইভটিজিং, মাদক, চোরাচালানসহ অপরাধ বিরোধী ঝটিকা অভিযান চলমান রাখেন ওসি লুৎফুল কবীর। দর্শনা থানা প্রতিষ্ঠার ২ বছর পেরিয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ দিকে ওসি লুৎফুল কবীর যোগদানের ১৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে। ১৩ মাসে থানা পুলিশের রয়েছে ব্যাপক সফলতা।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে দর্শনা থানার মামলা সংখ্যা সর্বমোট ২৯৫টি। যার মধ্যে ২৭০টি মামলার চার্জশিট ও পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক মামলার সংখ্যায় বেশী। মাদকসহ সর্বমোট আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৫৭ জনকে। ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে ২৩৫৫ বোতল, গাঁজা সাড়ে ৫৯ কেজি, গাঁজা গাছ ৪টি, ইয়াবা ১৩৭৫ পিস, কেরুজ বাংলা মদ ৬৭ লিটার, বিদেশি মদ ৩৯ বোতল, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ৫৭৯৬ পিস, বিদেশী সিগারেট ১৮৭০ প্যাকেট। এছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকটি চুরিকৃত ট্রাক, মোটর সাইকেল ও গরু। এ থানায় অফিসার ইনচার্জসহ ৩ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। এসআই ১২, এএসআই ১০, নারী এএসআই ১, কনস্টেবল ৩৩, নারী কনস্টেবল ৫ জনসহ রয়েছেন ১ জন বেতার ব্যবস্থাপক। থানার আওতাধীন রয়েছে হিজলগাড়ি, বেগমপুর ও তিতুদহ পুলিশ ক্যাম্প। দর্শনা থানায় উন্নিত হওয়ার পর থেকে মাঝে-মধ্যে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলেও সিংহভাগ সময় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক থাকে। দর্শনা শহরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বসবাস। জেলার ঐহিত্যবাহী কেরুজ চিনিকল, কাস্টমস সার্কেল, কলেজ, হাট বাজার, রেল স্টেশন, বন্দর ইয়ার্ডসহ অসংখ্যা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দর্শনাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে তৎকালীন বৃটিশ শাসনামলে স্থাপন করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি। দর্শনা পুরাতন বাজার সংলগ্ন পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে দীর্ঘদিন পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণেই পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে উন্নিত করে সংশি¬ষ্ট বিভাগ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। দর্শনা পোস্ট অফিসের সামনে সরকারি জমিতে নির্মাণ করা হয় দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ভবন।
এ ব্যাপারে থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, যেকোন মূল্যের বিনিময়ে মাদককে শূন্যের কোটায় আনার ঘোষণা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মাদকমুক্ত দেশ গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সে নির্দেশ মোতাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে মাদক মুক্ত থানা গঠনের অঙ্গিকার নিয়ে মাঠে রয়েছি আমরা। দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান রয়েছে অব্যাহত। দর্শনা থানাবাসীর সহযোগিতা এভাবেই অব্যাহত থাকলে অবশ্যই মাদকমুক্ত এলাকা গড়া সম্ভব হবে। তাই আসুন আমরা মাদককে না বলি, মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মাদককারবারী, চোরাচালানী ও অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।