ঝিনাইদহে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাদরাসা সুপারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বাজার গোপালপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিজ ঘর থেকে ইসমাইল হোসেন ওরফে সুজন নামের এক মাদরাসা সুপারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামের কলুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল হোসেন সুজন (৩০) সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে। চার বছর ধরে পরিবার নিয়ে তিনি শরিফুল ইসলামের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি বড়বাড়ি দাখিল মাদরাসার সুপার পদে কর্মরত ছিলেন।
পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীসূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা সদরের হলিধানী গ্রামের মাদরাসাপাড়ার স্কুল শিক্ষক আবুল খায়েরের ছেলে ইসমাইল হোসেন সুজন শিক্ষিত ও আলেম ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত। তিনি গ্রামের আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাসের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সে সময় ঝিনাইদহসহ সারাদেশে রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে জ¦ালাও পুড়াও শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার ক্ষমতায় আসলে সে নিজেকে আড়াল করতে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় বছর চারেক থাকার পর দেশে ফিরে আবারও উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। আবারও বাধসাধে রাজনীতির পুরাতন বিষয়গুলোর হিসাব নিকেশ। সে সময় সুজন নিজেকে আড়াল করতে সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বাজার গোপালপুরে ভাড়াবাসায় বসবাস এবং পালপাড়ার নিকট মাদরাসায় চাকরি শুরু করেন। সেখানে বেশ কয়েক বছর চাকরি করার পর সিদ্ধান্তে পরিবর্তন নিয়ে একই ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের বন্ধ হয়ে যাওয়া হাফেজিয়া মাদরাসা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। সুজনের আগ্রহ এবং কর্মকা-ে গ্রামের লোকজন খুশি হয়ে মাদরাসা আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে সুপার (প্রধান শিক্ষক) হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে মাদরাসাটি এবতেদায়ী চালু করা হয়। সেখানেই শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান আর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আরবি বিষয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে ভালোই চলছিলো।
জানতে চাইলে বড়বাড়ি গ্রামের মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপ্রতি কামরুজ্জামান বলেন, তিনি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর কয়েকটি গ্রামের যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো। প্রতিষ্ঠানে ৩০ জন শিক্ষার্থী কোরআন হেফজো পড়ছিলো এবং প্রায় ১৩০ শিক্ষার্থী এবতেদায়ী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করছিলো। তার এমন মৃত্যুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আমরা কোনো কিছুই মিলাতে পারছি না।
নিহতের শ্যালক মেহেদি হাসান জানান, তার বোন তিসা খাতুন গত মাসের ৪ তারিখে তাদের বাড়িতে গিয়েছেন। বাড়িতে সুজনের মা আর সুজন থাকতেন। সকালে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে তাদের খবর দেয়া হয়। তিনি বলেন, আমার দুলাভাইকে যে বা যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
মধুহাটি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, সকালে নিহত ইসমাইলের মা রহিমা খাতুন তাকে ডাকতে গিয়ে ঘরের মধ্যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দিলে সদর থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতের শ্যালক মেহেদি হাসান বলেন, তার বোন তিসা খাতুন গত মাসের ৪ তারিখে তাদের বাড়িতে এসেছেন। ওই বাড়িতে ইসমাইল ও তার মা থাকতেন। সকালে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে তাদের খবর দিয়েছেন। তিনি ঘটনাটিকে হত্যাকা- উল্লেখ্য করে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।