মাঠের পর মাঠ সবুজে ভরা : ভাদ্রের বৃষ্টি তোয়াক্কা না করে চলছে ধানকাটার ব্যস্ত সময়
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় এবার ধানের আবাদ যেমন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে তেমনই ফলনও বাম্পার হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে আলমডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চল হাড়োকান্দী বলেশ্বরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু চাষি পোকার আক্রমণের কথা জানিয়ে ফলন বিপর্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন। অবশ্য চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দায়িত্বশীলেরা বলেছেন, ধানে পোকা লাগার তেমন তথ্য এখনও পর্যন্ত কৃষকদের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার মোট ৪৩ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৮৫, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৮৪, জীবননগর উপজেলায় ৯ হাজার ১১৯ ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা উপপরিচালক আলী হাসান বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার প্রায় সকল এলাকার মাঠেই রয়েছে ধান। গত বছরের তুলনায় এবার যেমন ৪ হাজার ৬৭৩ হেক্টর বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে, তেমনই ফলনও হবে প্রত্যাশিত। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার মাঠগুলো এখন সবুজে ভরা। এ বছর ভাদ্রে ধানের অবাদের দিকে যেমন ধানচাষিরা ঝুঁকেছেন, তেমনই ফলনও ভালো হয়েছে। ধানচাষিদের মধ্যে আশাদুল হক, আব্দুল জলিল, শান্তি জোয়ার্দ্দার, আব্দুস সালামসহ অনেকেই ধানের আবাদ ও ফলন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে ফলন দেখে ধান চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। যদিও ধান উঠলে দাম কেমন থাকবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। অপরদিকে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর, হাড়োকান্দীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার চাষিদের মধ্যে ইয়ার আলী, আক্কাস আলী, বিদ্যুত ম-ল বলেছেন, ধানে ফড়িং পোকার মতো এক ধরনের পোকা লেগেছে। পোয়াতি ধানে এ ধরনের পোকা লাগার কারণে ধানে চিটা হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তবে ধানের আবাদ এবার ভালো হয়েছে বলে একমত হয়েছেন তারাও। তবে অতিবর্ষনে নি¤œœাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কিছু কৃষক ক্ষতির সমুক্ষিণ হয়েছেন।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় রোপা আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। দামুড়হুদা উপজেলার মাঠে মাঠে হাজার হাজার বিঘা সোনালি রঙের এ পাকা ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চাষিরা ভালো লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
দামুড়হুদা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, বোরো ধানের ভালো ফলন ও বাজার দর ভালো পাওয়ায় এবার কৃষকরা এ রোপা আউশ চাষের দিকে বেশি ঝুকে পড়েছে। উপজেলায় এবার রোপা আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৯ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৪হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ৮০৩ মেট্রিকটন। ইতোমধ্যে আগাম লাগানো জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে পুরোপুরিভাবে মাঠের ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। ফলনও ভালো হচ্ছে বিঘা প্রতি ১৭ থেকে ১৮ মণ ফলন হচ্ছে। এখন বাজার দর পেলে চাষিরা ভালো লাভবান হবে বলে আশা করছেন। দামুড়হুদা উপজেলা সদরসহ হাউলী, দেউলী, বিষ্ণপুর, রামনগর, কলাবাড়ী, সীমান্তবর্তী কুতুবপুর, মুন্সিপুর গ্রামের মাঠে ব্যাপক আকারে রোপা আউশ ধানের আবাদ হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের চাষি বেল্টু রহমান ও অক্তার হোসেন বলেন, উভয় দামুড়হুদা কলেজ মাঠে তিন বিঘা করে এবার বোরো ধান আবাদ করেছেন, খরচ খুবই কম হয়েছে। চলতি মরসুমে অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়নি। শুধুমাত্র সার ও নিড়ানি খরচ লেগেছে। ধান খুবই ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু করবেন। বাজার দর ভালো আছে এমন বাজার দর থাকলে ভালো লাভ হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান জানান, এবার আমাদের উপজেলায় ব্রি-৪৮ জাতের ধানের আবাদই সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এই জাতের ধানের ফলন সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। বর্ষা মরসুমের এ ধানে এবার কোনো রকম সেচ দিতে হয়নি ফলে খরচ কম হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে ফলন ও ভালো হচ্ছে। বাজারদর ও ভালো আছে এমন বাজার থাকলে চাষিরা ভালো লাভবান হবে বলে তিনি আশা করছেন।