চুয়াডাঙ্গায় দিনদিন বাড়ছে অনলাইন উদ্যোক্তা : করোনায় ফেসবুক হয়েছিলো সঙ্গী
বেচা-বিক্রিও ভালো : চার্জ বেশি হওয়াতে ডেলিভারি সমস্যা
খাইরুজ্জামান সেতু: দিনদিন অনলাইন উদ্যোক্তা বাড়ছে চুয়াডাঙ্গাতে। বিশেষ করে নারীরা সংসার ও পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন ব্যবসা করছেন। করোনাকালীন বাড়ি বসে থেকে অনেকেই অনলাইনে সময় কাটিয়েছেন। করোনা মহামারীতে ঘরে বসে নারীরা নিজে যেমন উপার্জনের উপায় খুঁজে নিয়েছেন, তেমনি অনেক পুরুষও নিজের কাজের পাশাপাশি ঘরে স্ত্রী, কন্যা কিংবা বোনকে অনলাইন ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন নারী শুধু চাকরি নয় বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। আর বর্তমানে নারীরা সেদিকেই হাঁটছেন। বর্তমানে পোশাক, শাড়ি-গয়না, ফার্নিচার থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী, ঘর সাজানোর পণ্য, শিশু খাদ্য, প্রসাধন সামগ্রীসহ এমন কিছু নেই, যা অনলাইনে কেনা-বেচা হচ্ছে না। আর ই-কমার্স নামে পরিচিত এ ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে ফেসবুক গ্রুপ বা পেজের মাধ্যমে বেচে বিক্রি দিন বাড়ছে, কারণ গ্রুপ খুলতে ডোমাইন, হোস্টিং কোনটাই লাগছে না। আর এই উদ্যোক্তাদের বেচা-বিক্রিও ভালো। তবে অধিকংশ উদোক্তারই অভিন্ন সমস্যা ডেলিভারি দেয়া।
চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার মেয়ে সিফাত, তিনি কাজ করছেন হোমমেড ফুড, জামদানি শাড়ি ও কামিজ নিয়ে। তার নিডস ফুড নামে ফেসবুকে পেজও আছে। তিনি জানান হঠাৎ তার স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যায় তারপর আস্তে আস্তে শুরু হয় মানুসিক টেনশন। এই সবকিছু কাটিয়ে উঠতে তার ব্যস্ততার প্রয়োজন। সিফাত রান্না করতে অনেক পছন্দ করতো; তাই নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। হঠাৎ তার মাথায় আসলো রান্না নিয়ে কিছু করবে। তারপর থেকে শুরু হলো ব্যবসার পথচলা। রুহি ইসলাম, তিনি সংসার সামলিয়ে জীবননগর থেকে কাজ করছে হাতের কাজের পোশাক নিয়ে। তার ফেসবুক পেজের নাম এপলিক বুটিজ হাউজ।
তিনি জানান, ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছে পড়াশোনা করে চাকরি করবেন না নিজে কিছু একটা করবে। আরেকজন গৃহিণী চুয়াডাঙ্গার পাপিয়া সুলতানা মুনি, তিনি জানান, ভেজালের এই যুগে আমার খাঁটি কৃষি খাদ্য পণ্য পৌঁছে যাক সবার রান্না ঘরে। এই চিন্তা মাথায় নিয়েই ব্যবসা শুরু। তিনি আরো জানান কুরিয়ার চার্জ বেশির কারনো মাল বিক্রি করতো সমস্যায় পড়তে হয়। হাফিজা খাতুন মিম, তিনি চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া থেকে ব্যবসা করছেন। তিনি জানান, বাড়িতে অবসর বসে বা থেকে কিছু করাও হলে কিছু ইনকামও হলো। জান্নাতুল তানজিয়া মেঘলা দর্শনা থেকে ব্যবসা শুরু করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনি দিয়ে। তিনিও সংসার সামলিয়ে নিজের পরিচয় তৈরি করার জন্য ব্যবসা শুরু করেছেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে অনলাইনে ব্যবসা করছে তাছলিমা আক্তার সোমা। তার পেজের নাম বসন্তবৌরি। তিনি একজন গৃহিণী, সংসার সামলিয়ে বিক্রি করছেন দেশি শাড়ি ও বাচ্চাদের পোশাক। জান্নাত-ই রিমি। তিনিও চুয়াডাঙ্গা থেকে কাজ করছেন। তিনি প্রথমে শুরু করেন শখেরবসে। সহযোগিতা করেছেন স্বামী ও মা। এখন তিনি কোর্ট এলাকায় একটা দোকান দিয়েছে। তিনিও মেয়েদের পোশাক বিক্রি করেন। হেলেনা আক্তার কামনা। তিনি আলমডাঙ্গা থেকে সব ধরনের হোমমেড কেক বিক্রি করছেন। তিনি জানান মাস্টার্স কমপ্লিট করার পরেও চাকরি বাকরি যখন হলো না; তখন নিজের প্রতিভাটাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে কাজ শুরু করে দেই। তার পেজের নাম ড্রিম কেক হাউজ। সালেহীন ইস্তুিয়াক তিনিও নিজের অন্যান্য ব্যবসা সামলিয়ে শখেবসে অনলাইনে মধু, ঘি, তেল বিক্রি করে। তার পেজের নাম খাঁটির খোজে। উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে একজন উদ্যোক্তা প্রতিমাসে সর্বনিম্ন ৩০/৩৫ হাজার ওপরে ৭০/ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করে থাকে।
এদিকে অধিকংশ উদ্যোক্তারই সমস্যা ডেলিভারি নিয়ে। লোকালে যেমন কোন কুরিয়ার সার্ভিস নেই, ঠিক তেমনি ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাতে পাঠাতে হলে কুরিয়ার চার্জ অনেক বেশি হয়ে যায়। এ কারণে অনেক ক্রেতা সব ঠিকঠাক হওয়ার পরও মাল নেয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, তাহলে উদ্যোক্তাদের বেচে বিক্রি আরে বাড়বে বলে মনে করেন উদ্যোক্তরা। আমার নাম মাহিয়া মাহনুর মেধা। চুয়াডাঙ্গাতে সর্বপ্রথম অনলাইন ব্যবসা আমি শুরু করি ২০১৭ সালে। হ্যান্ডমেড জুয়েলারির দিয়ে আমার যাত্রা শুরু।
মাহিয়া মাহনূর মেধা চুয়াডাঙ্গতে সর্বপ্রথম অনলাইন ব্যবসা আমি শুরু করি ২০১৭ সালে। হ্যান্ডমেড জুয়েলারির দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। আগ্রহ তৈরি হয় অনলাইনে শপিং করা থেকে এবং প্রথমআলো পত্রিকা তে অনলাইনে বাজিমাত করা উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটা প্রতিবেদন পড়েছিলো। খুব কৌতূহল বসতো পেইজ খোলা চেয়েছিলাম, আমাকে নিয়েও এমন প্রতিবেদন লেখা হবে। মূলত পত্রিকাতে যেন বড় ছবিসহ লেখা আসা এই জন্যই পথ চলা শুরু করা।