আপনারা ধৈর্য ধরেন আমরা সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম আছি ও থাকবো
আলমডাঙ্গার খাদিমপুরের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মাঝে নগত অর্থ ও শেডনেট বিতরণকালে ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার বানাতখাল মাঠে আগুনে পোড়া পানবরজ চাষিদের মাঝে নগত অর্থ ও শেডনেট বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আলমডাঙ্গার খাদিমপুরের বানাতখাল মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৮ চাষিদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগত ১০ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা নগত প্রদান করা হয়। ২০জন চাষিদের মধ্যে শেডনেট বিতরণ করা হয়। এছাড়াও আজ প্রত্যেক চাষিকে ৩০ কেজি চাল ও টিসিবির কার্ড দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে কাছে পেয়ে চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক চাষি, এনজিও ঋণ নিয়ে পানবরজ করেছিলো, আগুনে পুড়ে একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে এখন পথে বসে গেছে; এখন এনজিও কর্মীরা ঋণের কিস্তি নিয়ে বাড়িতে ধরনা দিচ্ছে। অনেক দিনমজুর পানবরজে শ্রম দিয়ে তাদের সংসার চালাতো, তারাও এখন বেকার হয়ে পড়েছে। এনজিও ঋণের কিস্তি কিভাবে দেবে? আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও শ্রমিকদের ঋণ মওফুকের দাবি জানান চাষিরা। এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, দেশে বর্তমানে আবহাওয়া খারাপ যাচ্ছে; সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, আপনাদের যে ক্ষতি হয়ে তা পুষিয়ে দেয়ার মতো নয়, তবুও আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি এবং আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা আমার আছে। আমি আরো চেষ্টা করবো কিছু করার। তিনি আরো বলেন, আপনি সিগারেট খেয়ে ফেলে দিলেন, এতে কতো বড় ক্ষতি হতে পারে আপনি বুঝতেও পারবেন না। এনজিওদের বলবেন গ্রামে আসবেন না। আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলবো, সবাইকে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়ে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, আমরা সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম আছি ও থাকবো। আবার কিভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্মআহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি মানুষের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন, চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নগুলো তার হাত দিয়েই হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে এমন উন্নয়ন কোনো সরকারের আমলে হয়নি। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ধৈর্য ধরার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে খাদিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহিদুর রহমান জোয়ার্দ্দার লোটাস বলেন, চিকিৎসার জন্য আমি দেশের বাইরে ছিলাম; আগুন লাগার সাথে সাথে চিকিৎসা শেষ না করেই এলাকায় ফিরে আসি। এলাকায় এসে সকল চাষিদের বাড়িতে গিয়েছি। তাদের বাড়িতে খাবার নেই, সারাদিন রোজা রেখে শুধুমাত্র পানি দিয়ে ইফতার করতে দেখেছি। একটি বাড়িতে গিয়ে দেখি ছোট্ট বাচ্চাকে দুধ কিনে দিতে না পেরে পানি খাওয়াচ্ছে, এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বাড়িতে এনজিও কর্মীরা আসছে ঋণ আদায় করতে, ঋণের কিস্তি না দিলে গরু-ছাগল খুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। কোন এনজিও বা কোন রাজনৈতিক দল সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর, আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ন্যাশনাল সেলস এগ্রোস্যাল লিমিটিডের ম্যানেজার কৃষিবিদ কেএম সাইফুল ইসলাম আরজু, এগ্রোস্যাল লিমিটিডের চুয়াডাঙ্গা পরিবেশক সাহাবউদ্দিন পল্টু। উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামসেদুর রহমান জোয়ার্দ্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী, জিনা ও আবু তালেব, মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন রতন, খাদিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিরুল ইসলামসহ ইউপি সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গার খাদিমপুরের বানাতখালী মাঠে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে প্রায় ৩শ বিঘা পানবরজ পুড়ে যায়। খাদিমপুর ও শিয়ালমারী গ্রামের মাঝামাঝি বানাতখালী মাঠে ভুট্টাক্ষেতের আগুন থেকে পানবরজে আগুন লাগে।