আখ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রোপণ পদ্ধতি করা হচ্ছে যান্ত্রিকীকরণ

কেরুজ কৃষি খামারে রিং পিট পদ্ধতিতে আখচাষ পরিদর্শনকালে যুগ্ম-সচিব মনিরুজ্জামান

নজরুল ইসলাম : চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল আখ। সেই আখ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ রিং পিট পদ্ধতিতে আখ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে চিনিকলের আওতাধীন ডিহি কৃষি খামারে রিং পিট পদ্ধতিতে আখ চাষ পরিদর্শনে আসেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মনিরুজ্জামান। এসময় তিনি বলেন, আখ একটি জনপ্রিয় অর্থকারি ফসল। এটি চিনি উৎপাদনের মূল উপাদান। কিন্তু চাহিদার তুলনায় আখ উৎপাদন অনেক কম। এর কারণও অনেক। সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব, ফসলের বৈচিত্র, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধি, ফলের বাগান তৈরী ইত্যাদি কারণে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। কম জমিতে অধিক পরিমাণ আখ উৎপাদন করার জন্য দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ রিং পিট নামে বিশেষ একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আখ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে চিনিশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকেরা যাতে আখ চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেয় তার জন্য নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হচ্ছে রিং পিট পদ্ধতিতে আখের চাষ। এছাড়া কৃষকদের আখ চাষের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য বীজ, সার, কীটনাশক সহায়তা দিয়ে থাকে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আখ চাষ করে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ ও ভালো মানের আখ উৎপাদন করা যায় শিল্পমন্ত্রাণালয় সেলক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একটিই উদ্দেশ্য চিনিশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এদিকে গত মরসুমে ফুরশেদপুর কৃষি খামারে অল্পকিছু জমিতে রিং পিট পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে আখ চাষ করা হয়। এ পদ্ধতিতে জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে একাধিক গর্ত করা হয়। এগুলো প্রায় এক থেকে দেড় ফুট গভীর করা হয়। এক একটি গর্তের মধ্যে ১২ থেকে ১৩টি এমন দুই চোখ যুক্ত আখের টুকরো লাগানো হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে সমপরিমাণ জমিতে সাধারণ আখ চাষের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি পরিমাণ উৎপাদিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
চিনিকলের ব্যাবস্থপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, শিল্পমন্ত্রাণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা স্যারের ত্বত্তাবধায়নে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের নির্দেশনায় আখ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে চিনিকলটি। এরই ধারাবাহিকতায় প্লান্টার মেশিন দিয়ে আখ চাষের পাশাপাশি রিং পিট পদ্ধতিতে আখ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সনাতন পদ্ধতিতে আখ চাষে যে উৎপাদন হয় তার চেয়ে অধিক ফলন হবে বলে মনে করছি। শুধু ফলনই না শ্রমিক খারচও সাশ্রয় হবে। চিনি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতেই রোপণ ও কর্তন যান্ত্রিকীকরণ করা হচ্ছে। যাতে ফলন বৃদ্ধি পায়। আখের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে এরই মধ্যে আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে করে চাষিরা আখ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীর নিকট আমার উদাত্ত্ব আহ্বান আপনাদের এ প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে অন্তত কম বেশি আখ চাষ করেন। কারণ আখের মূল্য নির্ধারিত এবং বিক্রির গ্যারান্টি আছে।
ডিহি কৃষি খামারের ইনচার্জ ইমদাদুল হক বলেন, দেশে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ। স্বল্প জমিতে অধিক আখ উৎপাদনের লক্ষ্যে রিং পিট পদ্ধতিতে আখ চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বে এই পদ্ধতিতে আখ চাষ হয়ে থাকে। সেখানে ফলনও বেশি। চাষিরা ইচ্ছা করলে যে কোন ধরণের জমিতে এ পদ্ধতিতে আখ চাষ করতে পারবে। কৃষিকে শিল্পে রূপান্তরিত করতে পারলে কমে যাবে দেশের বেকার সমস্যা। তাই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা খুবই জরুরী। বৃত্তাকার গর্তে আখ রোপণ করা হয়। তাই গোলাকৃতির পদ্ধতিটিকে রিং পিট বলা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন চিনিকলের মহা ব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভুইয়া প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More