অন্যের ব্লাঙ্ক চেক নিজের দাবি করে মামলা
ভালাইপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার কুলপালা গ্রামের পাট ব্যবসায়ী মকলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্যজনের দেয়া একটি ব্লাঙ্ক চেক, নিজের নামে লিখে, এক ব্যবসায়ীকে ২০ লাখ টাকার মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কুলপালা গ্রামের সুন্নত ম-লের ছেলে মাসিদুল হক ভূষিমালের ব্যবসা করতেন বামন্দী বাজারের লাল্টু মিয়ার সঙ্গে। ব্যবসার এক পর্যায়ে লাল্টু মিয়া মাসিদুলের কাছে ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা পাওনা করে। সে সময় ব্যবসাসূত্রে সম্পর্ক ভালো থাকায় মাসিদুল সরল বিশ্বাসে ব্যাংকের চেক বইয়ের একটি পাতায় টাকার অংক এবং গ্রহীতার নাম না লিখে ব্যবসায়ী পার্টনার লাল্টু মিয়াকে দেয় এবং বলে টাকা পরিশোধ হওয়ার পরই চেকটি ফেরৎ দিয়েন।
পরবর্তীতে ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় মাসিদুল পাওনাদারের টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। সেখানে যাবার কিছুদিন পর মাসিদুল জানতে পারে তার নামে প্রতারণা করে ২০ লাখ টাকার চেক ডিজওনার মামলা করেছে তারই গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন শাহ’র ছেলে পাট ব্যবসায়ী মোখলেচুর রহমান। যার সাথে মাসিদুলের ব্যাবসায়ী কোন লেনদেন বা চেক দেয়ার কোনো সম্পর্ক ছিলো না বলে অভিযোগ করেন মাসিদুল হক।
মাসিদুল হক আরও অফিযোগ করে বলেন, আমি সৌদি আরবে থাকায় আমার গ্রামের ছেলে মোখলেচুর রহমান মোবাইলফোনে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা অথবা আমার বাড়ির জমি তার নামে লিখে দিলে বিষয়টি মিটিয়ে দেবো এবং চেক ফেরত দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবে বলে আমাকে জানায়। টাকা বা জমি কোনটিই মোখলেচুরকে না দিতে চাওয়ায় আমার ব্যবসায়ী পার্টনার বামন্দীর লাল্টু মিয়াকে ফুঁসলিয়ে তাকে দেয়া ব্লাঙ্ক চেকটি হাতিয়ে নিয়ে তাতে ২০ লক্ষ টাকা লিখে কোটে মামলা করেছে যা এক প্রকার প্রতারণা। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করার জন্যও তিনি প্রশাসনের উর্ধ্বতনদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এদিকে মাসিদুল হক প্রবাসে থাকার সুযোগে অন্যের দেয়া চেক নিজের নামে লিখে মোটাঅঙ্কের টাকা বসিয়ে কোর্টে প্রতারণা করে মামলা করায় এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মাসিদুলের নামে এ ধরনের প্রতারণা করে ২০ লাখ টাকার মামলা দেয়ায় কুলপালা গ্রামের ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন ওরফে চাষি স্বপন বলেন, বামন্দী বাজারের ব্যবসায়ী লাল্টুর সাথে মাসিদুল হকের ব্যবসায়ী লেনদেন ছিল। সেই সূত্রে ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা লাল্টু মিয়া মাসিদুলের কাছে পেতো। ওই সময় মাসিদুল হক টাকা ফেরত দিতে না পারায় কুলপালা গ্রামে সালিসে বসে কয়েকজন ব্যবসায়ীর উপস্থিতিতে ১ বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেব জানিয়ে লাল্টু মিয়াকে একটি ব্লাঙ্ক চেক দেন। মাসিদুল হক বিদেশ যাওয়ার পর লাল্টু মিয়ার দূর সম্পর্কিত আত্মীয় কুলপালা গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন শাহ’র ছেলে মোখলেছুর রহমান, লাল্টু মিয়ার কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেকটি এনে মাসিদুল হকের পরিবারকে টাকা ফেরত দিতে চাপ দিতে থাকে। গ্রামের মাতবরদের টাকা আদায় করে দেয়ার জন্য বলেন, টাকা আদায় করতে না পেরে মোখলেছুর রহমান ব্লাঙ্ক চেকটি নিজের নামে লিখে ২০ লাখ টাকা বসিয়ে প্রতারণা করে মাসিদুল হকের নামে প্রতারণা মামলা করেছে। এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীরা জানেন। একই কথা বলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শুকুর আলী, আনোয়ার হোসেন ও দবির উদ্দিন ।
এ বিষয়ে বামন্দী বাজারের ব্যবসায়ী লাল্টুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কুলপালা গ্রামের আমার ব্যবসায়ী পার্টনার মাসিদুল হকের কাছে আমি ব্যবসায়ী হিসাব অনুযায়ী ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা পাবো। সে আমার সাথে প্রতারণা করে আমার টাকা ফেরত না দিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার আগে আমাকে একটি ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে গোপনে বিদেশ চলে যায়; তারপর থেকে সে আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ না করায় কুলপালা গ্রামের আমাদের জামায় ও আমার ব্যবসায়ী পার্টনার মাসিদুল হকের বন্ধু টাকা আদায় করার দায়িত্ব নেয়। পরে আমাদের জামায় মোখলেছুর রহমান আমার কাছে মাসিছুল হকের ব্লাঙ্ক চেক পেয়ে টাকা আদায় করার লক্ষ্যে নিজে বাদী হয়ে কোর্টে মামলা করেছে।
এ মামলার বিষয়ে মোখলেছুর রহমান বলেন আমার খালু শশুর সাথে আমার মাধ্যমেই লেনদেন শুরু করে মাসিদুল হক, ৬ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা ফেরৎ না দিয়ে প্রতারণা করে আমার খালু শশুর লাল্টু মিয়াকে একটি ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে বিদেশ চলে যায়। দীর্ঘদিন তার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে না পেয়ে তার নামে কোর্টে মামলা করা হয়েছে। এখন আর ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা হিসাব আসবে না চেকে যে মামলা করা হয়েছে সেই টাকার হিসাব হবে বলে জানান।