স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর কাটাখালি থানার ঘোড়ামারা নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় চালক, শিশু-নারীসহ নিহত ১৮ জনের বাড়িই রংপুরের পীরগঞ্জে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা উল্লেখিত স্থানে পীরগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে পিকনিকের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া হাইস-মাইক্রো বাসটিকে সামনে থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৬ জনসহ ১৮ জন নিহত হন। পীরগঞ্জ উপজেলার ৫ গ্রামের নিহতদের পরিবারগুলোতে শোকের মাতম চলছে। লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন গ্রামবাসী। কয়েকটি পরিবারে আহাজারি করারও কেউ নেই। নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কালো রংয়ের হাইস-মাইক্রোবাস নিয়ে পীরগঞ্জের কয়েকটি পরিবারের ১৮ জনকে নিয়ে রাজশাহীতে পিকনিকের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মাইক্রোবাসটি জুমার নামাজের পর রাজশাহীর কাটাখালি থানার সামনে সড়কের ডান পাশ দিয়ে চলতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এসময় মাইক্রোটিকে ছেঁচড়ে নিয়ে গেলে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের চালকসহ ৬ এবং হাসপাতালে ১২ জনসহ ১৮ জন যাত্রীই মারা যায়। রাজশাহীর কাটাখালি থানার সিসি টিভির ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায় পীরগঞ্জের কালো রংয়ের হাইস মাইক্রোবাসটি সড়কের ডানপাশ (ভুল পথে) দিয়ে চলছিলো। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে মাইক্রোতে আগুন ধরে যায়।
নিহতদের পরিচয়: উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মহজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়ার পরিবারের ৫ সদস্যই নিহত হন। তারা হলেন ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল মিয়া (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৭) ও ছোট মেয়ে সাজিদা (৩); একই ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের সাইদুর রহমান (৪৫), চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের সালাউদ্দিনের পরিবারের ৫ সদস্য ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন (৩৯), স্ত্রী শামছুন্নাহার (৩২), শ্যালিকা কামরুন্নাহার বেগম (২৫), ছেলে সাজিদ (১০) ও মেয়ে সাবাহ খাতুন (৩); পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার মোটর সাইকেল মেকার তাজুল ইসলাম ভুট্টোর পরিবারের ৩ সদস্য ভুট্টু (৪০), স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে ৮ম শ্রেণির ছাত্র ইয়ামিন (১৪); রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোকলেছার রহমানের পরিবারের ৩ সদস্য মোকলেছার রহমান (৪০), স্ত্রী পারভীন বেগম (৩৫), ছেলে পাভেল মিয়া (১৮) এবং মাইক্রোবাস চালক পৌরসভার পঁচাকান্দর গ্রামের হানিফ মিয়া ওরফে পঁচা (৩০) নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য উল্লেখিত গ্রামগুলোতে শোকের মাতম চলছে। লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন গ্রামবাসী এবং নিহতদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়স্বজন।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফুল মিয়া, মোকলেছার রহমান, মেকার ভুট্টু এবং সালাউদ্দিনের পরিবারের সকল সদস্যই নিহত হওয়ায় পরিবারের আর কেউই কান্নার নেই। ওইসব পরিবারের কর্তারা সবাই কর্মক্ষম এবং ব্যবসায়ী। নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে ফুল মিয়ার বৃদ্ধা মা ফইমনন্নেছা এবং মোকলেছারের একমাত্র মেয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা খাতুন বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছেন। বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে মোহনা এখন বাকরুদ্ধ। শুধু ফ্যালফ্যাল করে মানুষদেরকে দেখছেন। কান্নাও ভুলে গেছে মমতা। রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বিএসসি বলেন, এতগুলো লাশের (৫টি) শোক আমি কি বলে সান্ত¡না দিবো। পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ