বাংলাদেশ এখন অনেক খাদ্য বিদেশে রপ্তানি করছে
গাংনীতে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধনকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
গাংনী প্রতিনিধি: একদিকে সাজানে ফল আর ফসল। যেখানে চোখ আটকে যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরী করে বীরদর্পে অবস্থান করছে একটি মিষ্টি কুমড়া। ওজন তার দেড় মণ অর্থাৎ ৬০ কেজি। বিশালদেহী এই কুমড়া না দেখে দর্শনার্থী চলে যাবেন তা হতে পারে না। পাশেই রয়েছে আরও কিছু সবজি। যার মধ্যে এক কেজি বেশি ওজনের কয়েকটি বেগুন। এর পাশে রয়েছে আধা কেজি ওজনের পেঁয়াজ আর টমেটো। এ দৃশ্য মেহেরপুরের গাংনী কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা প্রাঙ্গনের। গতকাল সোমবার থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বর অডিটরিয়ামে শুরু হয়েছে তিনব্যাপী কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা। মেলায় সমলয় চাষ পদ্ধতি, বসতবাড়িতে পুষ্টি বাগান, জৈব সার, আদর্শ খামার ও বাড়ি, জৈব পোকা দমন পদ্ধতি, ধান লাগানো যন্ত্র, ফসল কাটা ও মাড়াই যন্ত্রসহ আধুনিক কৃষির নানা প্রকার প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
গতকাল সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা উদ্বোধন ঘোষণা করেন গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনী খাতুনে সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান প্রধান গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ।
মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে কৃষি প্রযুক্তি। প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিতে ফল ও ফসলের উৎপাদন বেড়েছে; বেড়েছে আকার ও আকৃতি। যার উদাহরণ একটি কুমড়ার ওজন দেড় মণ। গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের চাষি কালু মিয়ার পুকুরপাড়ে পতিত জমিতেই এ কুমড়াটি পাওয়া গেছে। অবশ্য অসংখ্য কুমড়া ধরলেও অন্য কুমড়াগুলো এত বড় হয়নি। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, এত বড় কুমড়া আমাদের দেশে সাধারণত হয় না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এমন বড় হতে পারে। এই কুমড়ার বীজ থেকে কোনভাবেই এমন বড় কুমড়া পাওয়া সম্ভব নয়। ব্যতিক্রমী তাই কৃষি প্রযুক্তি মেলা হিসেবে প্রদর্শনের জন্য আনা হয়েছে।
এদিকে মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে কেজি ওজনের বেশি বড় বেগুন। গাংনী ঈদগাহপাড়ার চাষি আলফাজ উদ্দীন দীর্ঘদিন ধরে বাছাই করে এ জাতটি সামনে নিয়ে আসেন। যার নাম দেয়া হয়েছে আলফাজ বেগুন। স্বাদে ও মানে অতুলনীয় এই আলফাজ বেগুন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে স্বদেশ সীড ও কৃষি বিভাগ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এম এ খালেক বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক খাদ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আগামী দিনে আরও বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হবে। কম খরচে অধিক উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগের কাছে খোঁজ নিতে হবে। সরকারের একটি বড় ভিশন বাস্তবায়নে তারা আপনাদের সহায়তা করবে। এতে কৃষকরা অধিক ফলন পাবেন আর লাভও বেশি হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কৃষি গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার কৃষিতে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। যাতে কৃষকরা সরকারি সহায়তায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কৃষির মাধ্যমে দেখতে এগিয়ে নিতে পারে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনী খাতুন বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্য সঙ্কট ছিলো। কিন্তু এখন ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে জমির পরিমাণ কিন্তু বাড়েনি। আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের খোরপোষের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত হয়েছে। কৃষির সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বাগতে বক্তব্যে বাংলাদেশের কৃষির চিত্র তুলে ধরেন উপজেলা কৃষি অফিসার। একই সঙ্গে আধুনিক কৃষিতে গাংনী উপজেলার উজ্জ্বল অবস্থান ব্যাখা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে কৃষি অফিসার স্টল ছাড়াও বীজ উৎপানকারী প্রতিষ্ঠান স্বদেশ সীড ও বিল্লাল নার্সারির স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার শুরু থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে উদ্যোগী চাষিদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যনীয়।