সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলায় শাক বীজ উৎপাদনে পাল্টে দিয়েছে অনেক কৃষকের ভাগ্য। বদলে দিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। এক সময় শুধু ইরি-বোরো ও আমন চাষের পাশাপাশি প্রচলিত কিছু শাক-সবজি চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কৃষিকাজ। কিন্তু এখন আধুনিক পদ্ধতিতে নানা জাতের লাল শাক আবাদ করে তা থেকে বীজ উৎপাদন করে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। ধানের জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে লাল শাক বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এখানকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষকদের কাছে এখন শাক বীজ উৎপাদন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করা যায় বলে প্রতিবছরই শাক বীজ উৎপাদনে মেতে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। এ কারণে উপজেলায় শাক বীজ উৎপাদনে নিরব বিপ্লব ঘটেছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি মরসুমে উপজেলার আব্দুলবাড়িয়া, দেহাটি, কাশিপুর, অনন্তপুর, নিশ্চিন্তপুর, পুরন্দপুর, বাঁকা ও মুক্তারপুর গ্রামে ২৩৭ হেক্টর জতিতে উচ্চ ফলনশীল নানা জাতের লাল শাকের আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৫৭০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হবে এবং উৎপাদিত বীজ বিক্রি করে কৃষকরা ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা পাবেন।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমিতে লাল শাকের এক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় এবং মনে হয় এলাকার মাঠগুলো যেন সবুজের বুকে লাল আবরণে ঢাকা পড়েছে।
এ ব্যাপারে আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের সফল শাক বীজ উৎপাদনকারী চাষি শুকুর আলী জানান, আজ থেকে ১৫ বছর আগে এ এলাকায় প্রথম তিনি শাক বীজ উৎপাদন শুরু করেন। ওই বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ১ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত বীজ প্রায় ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ফলে অধিক পরিমান লাভ হওয়ায় পরের বছর তিনি জমির পরিমান আরও বাড়িয়ে দেন। এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে শাকের আবাদ করেছেন এবং তা থেকে তিনি ৪০ মন বীজ উৎপাদন করবেন। ৫ বিঘা জমিতে উৎপাদিত বীজ তিনি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি জানান, অগ্রহায়ণ মাষে ভালভাবে জমি কর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে শাক চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। জমিতে বীজ বপনের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাথায় চারা গজায়। ৪ মাসের মাথায় জমি থেকে গাছ কেটে বীজ সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিবিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ মন বীজ উৎপাদিত হয়। জমি তৈরি থেকে বীজ সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত বীজ বিক্রি হয়ে থাকে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা।
শুকুর আলী একা নন। তার দেখাদেখি অনেক কৃষক সবজি চাষ করে তা থেকে বীজ উৎপাদন শুরু করেছেন। এভাবে ধীরে ধীরে তারা শাকের বীজ উৎপাদনে বেছে নিয়েছেন জীবন-জীবিকার অবলম্বন হিসেবে। ইতোমধ্যেই উপজেলার আব্দুলবাড়িয়া, দেহাটি, কাশিপুর, অনন্তপুর, নিশ্চিন্তপুর, পুরন্দপুর, বাঁকা ও মুক্তারপুর গ্রামের প্রায় সহশ্রাধিক কৃষক সবজি বীজ উৎপাদন করে বদলে নিয়েছেন নিজেদের ভাগ্য।
কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সবজি ক্ষেতের উপযোগী জমির খাজনা বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও চাষের নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া এলাকার জমিগুলো সবজি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এখানকার চাষিরা সবজি চাষের ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞও। এ কারণে এলাকার চাষিরা উন্নত কৃষি প্রযুক্তির আওতায় সবজি চাষে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন স্পন্দন এনেছেন।